স্ত্রী ও দুই সন্তানের ‘ঘাতক’ হিফজুরই- এমন ধারণা পুলিশের। ৩ জনেরই ছিল গলাকাটা। শরীরে কোপানোর চিহ্ন। কিন্তু শিশুদের পিতা হিফজুরের শুধু পায়ে আঘাত ছিল। সেই আঘাতও ততটা গুরুতর নয়। ঘটনার পর থেকে হিফজুর নিজেও অজ্ঞান হওয়ার ভান করছিল। এরই মধ্যে পুলিশ তাকে হাসপাতালের বেডে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চালায়। কিন্তু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও হিফজুরের কথাবার্তা ছিল অগোছালো।
‘মানুষ কাটিনি, মাছ কাটছি’- এ ধরনের কথাবার্তা আওড়াচ্ছিলেন তিনি। সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিন্নাকান্দি গ্রামের বসতঘর থেকে গত বুধবার সকালে হিফজুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন স্থানীয়রা। একই সময় তার ঘরের খাটের উপর স্ত্রী আলেয়া, ছেলে মিজান ও মেয়ে তাহসিনার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কী কারণে এই ৩ খুন- এ নিয়ে লাশ উদ্ধারের পর থেকেই তদন্তে নামে পুলিশ। সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ঘটনার দিনই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পারিবারিক কারণে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। হিফজুরও সন্দেহের বাইরে নয়। এর বাইরে পুলিশ মামাদের সঙ্গে বিরোধসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করে। কিন্তু কোনো অনুসন্ধানই ঘটনার কাছাকাছি যায়নি। পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। পুলিশ জানায়, হিফজুর ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। এসব ঝগড়ার বিষয় আশপাশের লোকজনও জানতেন। এ নিয়ে সালিশও হয়েছিল। শুক্রবার ছিল হিফজুরের শ্যালিকার বিয়ে। এই বিয়েতে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে হিফজুর ও আলেয়ার মধ্যে মনোমানিল্য হয়। আর এই মনোমানিল্যের জের ধরে হিফজুর খুন করতে পারে স্ত্রী ও সন্তানদের- এমন ধারণা পুলিশের। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হিফজুর রহমান। পুলিশ পাহারায় তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দেয়নি। হাসপাতালে থাকা হিফজুর রহমানকে গতকাল পর্যন্ত আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) লুৎফর রহমান। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হিফজুর এখনো চিকিৎসাধীন। ঘটনার সময়ে ওই ঘরে ছিলেন হিফজুর রহমান। একমাত্র তিনি বলতে পারেন কী ঘটেছে। আলেয়া ও দুই সন্তানের গলাকাটা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হিফজুরের আঘাত বেশি নয়। এ কারণে পুলিশ হাসপাতালের বেডে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, হিফজুর সন্দেহজনক কথা বলছেন। পাগলের মতো আচরণ করছেন। এ কারণে পুলিশের সন্দেহ গভীর হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে হিফজুরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। সুস্থ হলে হিফজুরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান। ঘটনার পর বুধবার সকালে পুলিশ হিফজুরের ঘর থেকে একটি বটি উদ্ধার করেছে। ওই বটি রক্তমাখা ছিল। এদিকে, মা ও দুই সন্তান হত্যার ঘটনায় বুধবার রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করেছেন নিহত আলেয়া বেগমের পিতা আইয়ুব আলী। গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হলে পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে আসামিদের নাম সংযুক্ত করবে। ঘটনাটিকে পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে বলে জানান তিনি। বেঁচে গেছে আফসান: মামার বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছে হিফজুর রহমানের মেজো ছেলে আফছান। সে এখনো জানে না তার মা ও ভাইবোন জীবিত নেই। আফছানের নানা আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, আফছান বর্তমানে আমাদের বাড়িতে আছে। তাকে মা ও ভাইবোনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। সে এই বাড়িতে থাকলে জীবিত থাকতো না।