জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ গতকাল রবিবার বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বঙ্গভবনে প্রায় পুরো সময়েই তিনি ছিলেন নিশ্চুপ ও গম্ভীর। তেমন কথা বলেননি কারও সঙ্গেই। মাঝখানে সামান্য দূরত্ব রেখে ডানে বসা স্ত্রী ও দশম সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গেও কথা বলেননি। ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তিনি সরাসরি যান বঙ্গভবনে। এরপর সিএমইচ হয়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় তিনি বারিধারায় নিজের বাসায় পৌঁছান। ততক্ষণে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর ১২ ডিসেম্বর রাতে নিজের বাসা থেকে সিএমইচে গিয়ে ভর্তি হন এরশাদ। নানা জল্পনা-কল্পনা ও নাটকীয়তা শেষে শনিবার সিএমইএইচ থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। শপথ শেষে আবারও ফিরে যান হাসপাতালে। টানা এক মাস সিএমএইচে ‘চিকিত্সা’ শেষে গতকাল তিনি বাসায় ফিরলেন।
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এরশাদ বঙ্গভবনে যান। অনুষ্ঠানস্থলের সামনের সারিতে বসেন তিনি। তার ডানে সামান্য দূরে বসেছিলেন রওশন এরশাদ। রওশনের ডানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এরশাদের বাম পাশের আসনে বসেছিলেন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। শপথ অনুষ্ঠানের প্রায় পুরো সময়ই তিনি নিশ্চুপ থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মন্ত্রিসভার শপথ শেষে দু’-একজন মন্ত্রীর সঙ্গে তার দু’-এক বাক্যের কুশল বিনিময় হয়। বঙ্গভবন থেকে বেরুনোর সময় সাংবাদিকরা নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ভালোই হয়েছে, খারাপ তো মনে হচ্ছে না।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন ‘আমি সুস্থ, শিগগিরই বাসায় ফিরবো। আর ইলেকশন যখন হয়েই গেলো, সে কারণে সংসদেও অবশ্যই যাবো।’ এর আগে এরশাদ যখন বঙ্গভবনে দরবার হলে এসে পৌঁছান তখন উপস্থিত অতিথির করতালি ও হর্ষধ্বনি দেন। কেউ কেউ টিপ্পনিও কাটেন।
এরশাদের ব্যক্তিগত স্টাফ সূত্রে জানা গেছে, সিএমএইচ থেকে বিকেলে বঙ্গভবনে যাওয়ার সময়ই হাসপাতালে থাকা এরশাদের ব্যবহূত জিনিসপত্র ব্যাগে ঢুকালো হয়। স্টাফদের জানিয়ে দেয়া হয়, বঙ্গভবন থেকে তিনি বাসায় ফিরবেন। এরপর বিকেল থেকেই জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ও মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ঢাকা মহানগর জাপার (উত্তর) সভাপতি ফয়সল চিশতি ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুলসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকরা এরশাদের বারিধারার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। বিকেল সোয়া চারটার মধ্যেই বঙ্গভবনের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলেও তিনি বাসায় পৌঁছান দীর্ঘসময় পর, পৌনে ৭টার দিকে। বিশেষ ব্যবস্থায় আসা এরশাদ লিফটে সরাসরি ভবনের পঞ্চম তলায় বাসায় চলে যান। এসময় তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলেননি। কিছু সময় পরে এরশাদের বাসায় যান ভাই জিএম কাদের। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি যখন বাসায় পৌঁছান ততক্ষণে তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সূত্রমতে, বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে সরাসরি সিএমইচে যান এরশাদ। সেখান থেকেই বাসায় ফিরেন তিনি।
এদিকে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিকেল তিনটায় বঙ্গভবনে আসেন রওশন এরশাদ। এসময় বঙ্গভবনের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে এ মুহূর্তে কোনো কথা বলবো না। এখন আপনারা আমার ছবিও তুলবেন না।’ এরপর কোনো কথা না বলেই বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান রওশন। বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও যোগ দেন।