জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে গণবাহিনীর সদস্য ও চরমপন্থি নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’। সেই সঙ্গে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে দ্রুত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করার আহ্বান জানান তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের শিক্ষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমির হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক আনোয়ার ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অন্যান্য মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষকসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতির সামনে চরমভাবে অসম্মান ও হেয় করেন। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ করেন। চরমপন্থি রাজনীতি ও জাসদ গণবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য এবং ভারতীয় হাইকমিশনারকে অপহরণের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারের বক্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা না করে আওয়ামীবিদ্বেষী অধ্যাপক আনোয়ার বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাতের উন্মাদনায় মেতে ওঠেছিলেন। অশিষ্ট ভাষায় জাতির জনকের ব্যক্তিত্বকে হেয় ও প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এই সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরচক্র গোপনে সংগঠিত হতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘কথিত আছে যে, বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অধ্যাপক আনোয়ার ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে খুশিতে নেচেছিলেন। ২০১০ সালে প্রকশিত “মহান মুক্তিযুদ্ধ” ও ২০১২ সালে প্রকাশিত “৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহের” অধ্যাপক আনোয়ারের লেখা বই দুটি পড়লে যে কেউই বুঝতে পারবেন তিনি কতটা আওয়ামী ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী মানসিকতা লালন করেন। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের আওয়ামীবিরোধী বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাদা দলের নেতা হয়ে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে জামায়াতের বিস্তারকে তিনি যথেষ্ট প্রশ্রয় দিয়েছেন। ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে অপহরণের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে অধ্যাপক আনোয়ার পাঁচ বছর জেল খাটেন। কথিত আছে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর একজন জামায়াতপন্থি শিক্ষকের সহায়তায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ফিরে পান এবং একই শিক্ষকের সহায়তায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করেন।’
অধ্যাপক আমির হোসেন আরো বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য জেনারেল জিয়াকে দায়ী করে অধ্যাপক আনোয়ার রাতারাতি বিএনপি-জামায়াত বিরোধী বনে যান। ভাই তাহেরর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সুযোগ বুঝে এক সময় আওয়ামী রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন। আওয়ামী আদর্শের চেতনা ধারণ করে অধ্যাপক আনোয়ার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি, সম্পৃক্ত হয়েছেন ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধের নেশায় এবং পদ-পদবী পাবার লোভে- তার কর্মকাণ্ড থেকে এর প্রমাণ মেলে।’
এসময় অধ্যাপক আমির হোসেন কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করেন- উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সন্ত্রাসীবাহিনীর হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তিনি নিজে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের শিক্ষকসহ একাধিক শিক্ষককে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অব্যাহতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ৩ প্রভোস্টকে। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামীপন্থি সংগঠনের একজন ডিনকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রচণ্ড বাধার মুখে তা প্রত্যাহার করেন ও তিনি একবার একসঙ্গে ৮ জন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকের শিক্ষছুটি আটকে দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে তিনি নানাভাবে অপমান করেন এবং জনসম্মুখে তার সম্পর্কে কটূক্তি এবং তার বিরুদ্ধে রিট মামলা করেন এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতির বাসায় বোমা হামলা করান, ধারালো অস্ত্র রেখে আসার ব্যবস্থা করেন, চাকরি বিধি উল্লেখ করে হুমকিমূলক চিঠি দেন এবং তার বিরুদ্ধে রিট মামলা করেন। লোভ-লালসা দেখিয়ে জাবির সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজকে খণ্ড খণ্ড করার অপচেষ্টা করেন। তার কারণে শিক্ষক সমিতি ও সিন্ডিকেট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ বেশ কয়েকটি আসনে পরাজিত হয়।
তিনি আরো জানান, গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন অবৈধভাবে ঢাকার বাসায় সিন্ডিকেট সভা ডাকেন। সে সভায় অবাঞ্ছিত উপাচার্য ও দুই উপ-উপাচার্যসহ মাত্র ৬ জন অনির্বাচিত নিয়োগপ্রাপ্ত সিন্ডিকেট সদস্য যোগ দেন। অবাঞ্ছিত ও বিতাড়িত উপাচার্যের সভাপতিত্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার কোনো সিদ্ধান্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রহণ করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নুরুল আলম, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক শাহেদুর রশীদ, অধ্যাপক জোহরা খানম, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক কবিরুল বাশার, সহযোগী অধ্যাপক বসির আহমেদ, আ স ম ফিরোজুল হাসান, কে এম আক্কাস আলী, সিকদার মোহাম্মদ জুলকার নাইন, মো. সাব্বির আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য ফোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যায়ের ‘অবাঞ্ছিত’ উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বর্তমানে ঢাকার উত্তরার বাড়ি নং-৭; সড়ক নং-৫; সেক্টর-৫; উত্তরা, ঢাকার বাসাটি এখন থেকে উপাচার্যের বাসভবন এবং আফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন।