আধুনিক এই যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় প্রসবকালে ব্যথার অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে সিজারিয়ান অপারেশনে আধুনিক মায়েদের আগ্রহ থাকলেও সিলেটে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি।
শুক্রবার (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওসমানী হাসপাতালের গাইনি বিভাগে পাঁচ হাজার ৭১৫ প্রসূতি স্বাভাবিক (নরমাল) সন্তান প্রসব করেছেন। এ সময়ে সাত হাজার ৩১১ নারী সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এছাড়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৪ মে পর্যন্ত চার হাজার ৮৯ প্রসূতি স্বাভাবিক (নরমাল) সন্তান প্রসব করেছেন। বিপরীতে ওই সময়ে পাঁচ হাজার ৭৯৫ নারী সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন।
আগে সিজারে সন্তান জন্মদানের হার ৮৩ শতাংশ ছিল জানিয়ে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালে সিজারের হার অনেক কমেছে। এখন ৫৫ শতাংশ নারী সিজারে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। আর ৪৫ শতাংশ নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে।
হাসপাতালে কথা হয় একজন উপ-পরিচালক, একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বলেন, সন্তান জন্ম দানকালে মায়ের মৃত্যু হওয়া এক সময় অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। তবে এখন সেটি আর স্বাভাবিক নয়। মাতৃমৃত্যুর খবর শুনলেই প্রশ্ন ওঠে, কেন মৃত্যু হলো? গত দুই দশকে সিলেটে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। তবে আরও কমানোর চেষ্টাও চলছে।
ডা. হিমাংশু লাল রায় জাগো নিউজকে বলেন, এখনও ৫৮ শতাংশ গর্ভবতী গ্রামেগঞ্জে প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীর দ্বারা সন্তান প্রসব করেন। আর অদক্ষ ধাত্রী দিয়ে সন্তান প্রসবের চেষ্টার সময় বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হলে হাসপাতালে আসেন। গর্ভ ও প্রসবকালীন সময়ে তারা আধুনিক চিকিৎসার শরণাপন্ন হন না বলেই মৃত্যুর হার আরও কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শতভাগ প্রসূতির আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ডে আনা সম্ভব। একজন মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হলে প্রসবোত্তর কমপক্ষে চারবার গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নিতে হবে। ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬ সপ্তাহে সেবা নিশ্চিত করা গেলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ১৫ শতাংশ সিজার ও ৮৫ শতাংশ নরমাল বা স্বাভাবিক প্রসব করানোর কথা। কিন্তু শিক্ষিত ও পেশাজীবী প্রসূতিরা ব্যথামুক্ত প্রসব করাতে বেশি আগ্রহী। তারা নরমাল ডেলিভারির যে ব্যথা সেটি সহ্য করতে চান না। তাই পেট কেটে হলেও সন্তান প্রসবে বেশি আগ্রহী। এ কারণেই সিজারে সন্তান প্রসবের হার কমানো যাচ্ছে না।
এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধাক ও মিড্ওয়াইফার প্রশিক্ষক রেনুয়ারা আক্তার বলেন, সন্তান ধারণের বিপদ অনেক কমে যেতে পারে যদি মহিলা স্বাস্থ্যবতী হন, গর্ভবতী হওয়ার আগে পুষ্টি ঠিক থাকে, যদি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী বা মিড্ওয়াইফারের তত্ত্বাবধানে তার প্রসব হয়।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি দেশে প্রশিক্ষিত ধাত্রীরও স্বল্পতা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে ১০-১২ নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। তবে করোনার কারণে এ সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কারণ করোনার ভয়ে অনেকে হাসপাতালে আসতে চান না।