ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠকের পর আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই যুদ্ধবিরতি টেকসই করার ওপর জোর দিয়েছেন।
ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ১১দিন রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলার পর মিসরের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে ২১মে রাতে। তবে ব্লিঙ্কেন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যাতে লাভবান না হয় সেটা তারা নিশ্চিত করবেন।
তিনি ইসরাইলকেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে সেদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ‘আমেরিকা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
আমেরেকিান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আমেরিকা ফিলিস্তিনের সাথে তার সম্পর্ক আবার নতুন করে গড়ে তোলার জন্য জেরুজালেমে তাদের কনস্যুলেট দূতাবাস খুলছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করতে আমেরিকা অর্থসাহায্য করবে।
১১ দিনের তীব্র লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে আড়াই শ’র বেশি মানুষ যাদের অধিকাংশই গাজায়।
ব্লিঙ্কেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় যান মঙ্গলবার এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে কথা বলেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমি এখানে বলতে চাই যে , প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি এবং ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে সম্পর্ক পুর্নগঠনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই সম্পর্ক গঠিত হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলিরা স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা ও মানবিক মূল্যবোধের বিচারে সমান বলে আমেরিকার বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক আমরা আবার করতে চাই’ ।
ফিলিস্তিনিরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ইসরাইলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে তা প্রত্যাখান করেছিল।
ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনের জন্য সহায়তা আবার পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেন যা তার আগে বন্ধ ছিল। বন্ধ করে দেয়া দূতাবাসগুলোও আবার খোলার অঙ্গীকার তিনি করেন।
ব্লিঙ্কেন ঘোষণা করেছেন জেরুসালেমের কনস্যুলেট আবার চালু করার মাধ্যমে ‘ফিলিস্তিনের জনগণকে সাহায্যদান এবং তাদের সাথে কথাবার্তা বলার’ প্রক্রিয়া আমেরিকা আবার শুরু করতে চায়।
এই কনস্যুলেট ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের বিষয়াবলী দেখাশোনা করত। পরে ইসরাইলে বিতর্কিত নতুন দূতাবাস খুলে ট্রাম্প প্রশাসন এই কনস্যুলেটের কার্যক্রম সেখানে সরিয়ে নিয়ে যান। এর ফলে ফিলিস্তিনে আমেরিকান দূতাবাসের কার্যক্রম গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
ফিলিস্তিনি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা বা পিএলও-র দফতর আবার খোলার বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। এই অফিসও ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে তার তিন দিনের সফরের শুরুতে ব্লিঙ্কেন জেরুসালেমে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথেও বৈঠক করেন।
এক টুইট বার্তায় ব্লিঙ্কেন বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় আমেরিকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি এবং শান্তি, নিরাপত্তা এবং সবার জন্যই সম্মান ও মর্যাদার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি।
নেতানিয়াহু ইসরাইলের আত্মরক্ষার বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন যে, ‘হামাস যদি শান্তি ভঙ্গ করে ইসরাইলের প্রতি আক্রমণ চালায়, ইসরাইল খুবই কঠোরভাবে তার জবাব দেবে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘পর্দার পেছনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জোরালো কূটনৈতিক প্রজ্ঞা গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি অর্জনে সাহায্য করেছে। এখন এই প্রক্রিয়া আরো এগিয়ে নেবার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’
জাতিসঙ্ঘ বলেছেন সাম্প্রতিক এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে ২৪২জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ৬৬জন শিশু এবং ৩৮জন নারী। তাদের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে নিহতদের মধ্যে ১২৯জনই বেসামরিক ফিলিস্তিনি।
তারা আরো বলেছে, এদের মধ্যে ২৩০জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণে। সামান্য কিছু হতাহত হয়েছে হামাসের ছোঁড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাজায় পড়ার কারণে।
ইসরাইল দাবি করেছে এই লড়াইয়ে তারা ২০০-এর বেশি জঙ্গীকে হত্যা করেছে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদ তাদের যোদ্ধাদের মধ্যে হতাহতের কোনো পরিসংখ্যান দেয়নি। ইসরাইলে মারা গেছে ১৩জন, যার মধ্যে দু’জন শিশু এবং তিনজন বিদেশি নাগরিক।
ইসরাইলের মেডিক্যাল সূত্র জানিয়েছে, হামাসের ছোঁড়া রকেটে বা রকেট হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাবার সময় এদের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি