ব্রেকিং নিউজ
Home / সিলেট / সিলেট-৩ উপনির্বাচন সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা

সিলেট-৩ উপনির্বাচন সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা

 

ওয়েছ খছরু

জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। খুব শিগগিরই তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। মহামারি করোনায় পরপর তিনবারের এমপি মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে এখনো আগ্রহ নেই বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। এলাকায়ও দেখা যাচ্ছে না বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তবে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঈদের পরপরই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা শুরু করেছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যেই ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।

পোস্টারে দলীয় প্রতীক নৌকা লাগিয়েও তারা নেমেছেন প্রচারণায়। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন নেতাকর্মীরাও। তবে দিনে দিনে ছোটো হয়ে আসছে প্রার্থী তালিকা। ইতিমধ্যে অনেকেই নীরব হয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ ভোটের মাঠ ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে দলীয় মনোনয়নের জন্য ধরনা দিতে শুরু করেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় অন্তত ২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬-৭ জনকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে। ঈদ-পরবর্তী ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। আবার কোনো কোনো প্রার্থীর বাড়িতে এসে নেতাকর্মীরা দেখা করছেন। সিলেট-৩ আসনের নির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠে নানা সমীকরণ চলছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ভেতরেই চলছে সবচেয়ে বেশি হিসাব-নিকাশ। জাতীয় পার্টিও চায় আসনটি তাদের দখলে নিতে। এ কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ঢাকায় লবিংয়ে ব্যস্ত। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এটি একটি উপনির্বাচন। এখানে আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর আসনটি শূণ্য হয়েছে। সুতরাং প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীক নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করতে পারে। অপরদিকে বিএনপি ও তার শরিক দলের নেতারা এখনো উপনির্বাচন নিয়ে মুখ খুলছেন না। দলের সিগন্যাল পেলে এ আসনে এতে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর অভাব নেই। প্রয়াত এমপি জীবদ্দশায়ই অনেকেই নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু নৌকার কাণ্ডারী ছিলেন মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী। ফলে তাদের ভাগ্যে জুটেনি মনোয়ন। এ কারণে এবার সুযোগ নিতে সর্বস্ব নিয়োগ করে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত ১৫ জন প্রার্থীর নাম শোনা গিয়েছিল। কিন্তু ভোটে মাঠে দেখা যাচ্ছে খুব কম সংখ্যক প্রার্থীকে। প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব থেকে তিনি সবার নজর কেড়েছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব এ আসনে নৌকার টিকিট পেতে অনেক আগে থেকেই লড়াইয়ে রয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পাশাপাশি তিনিও নৌকার টিকিট চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি। এর পরের দুই নির্বাচনেও তিনি টিকিট চেয়েছিলেন। ঈদ-পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতাদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাড়ি দক্ষিণ সুরমায়। আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এবারের উপনির্বাচনে নৌকার জন্য আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) ছুটে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ঈদের পর এ আসনে পুরোপুরি সক্রিয় হয়েছেন বিএমএর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী। এর আগেও তিনি এ আসনে তিন উপজেলায়ই মতবিনিময় করেছেন। তবে ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই তিনি ছুটে যাচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশছেন। ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগ সভাপতি স্যার এনামুল ইসলাম আগে থেকেই মাঠে। গত রমজানে তিনি প্রতিদিনই সহায়তা নিয়ে মানুষের কাছে ছুটে গেলেও ঈদের পর থেকে নিরব রয়েছেন। এছাড়া এ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় যাওয়া-আসা করছেন সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে থাকা প্রয়াত এমপির স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর জীবদ্দশায় তার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে তার সকল কর্মকাণ্ডে অতীতে যেমন পাশে ছিলাম, আগামী দিনেও একইভাবে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জবাসীর কাছে থাকতে আমি আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও আশীর্বাদ পেলে প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে আমি আগামী দিনে সিলেট-৩ নির্বাচনী এলাকার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।’ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবও এক যুগ ধরে এ আসনের নির্বাচনী মাঠে থাকায় অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। তিনি জানিয়েছেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর আস্থা রাখলে তিনি এ আসনে নৌকার প্রার্থী হতে চান। ইতিমধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষ তার পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তিনি কাজ করবেন বলে জানান।’ জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে প্রার্থী সংখ্যাও কয়েকজন। তবে মাঠে উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল। তারা এলাকায় পোস্টার ব্যানার লাগিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। সিলেট জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে কী না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। দলীয় প্রতীকে কেউ মনোনয়ন পেলে তার পক্ষেই থাকবেন দলের সব নেতাকর্মীরা