রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মামলায় কারাবন্দি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে ঘসেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন হিরন জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানিতে রোজিনা ইসলামের ভূমিকাকে ইতিহাসের খলনায়ক ঘসেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন।
রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, আমিনুল গণি টিটো প্রমুখ।
জামিন শুনানিতে এহসানুল হক সমাজী বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে এই মামলাটি সাজানো, মিথ্যা এবং বানোয়াট। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয়নি। তার কাছ থেকে কী ডকুমেন্টস (নথিপত্র) জব্দ করা হয়েছে তার কোনো বর্ণনা নেই এজাহারে। তার কাছ থেকে কোনো ডকুমেন্টস উদ্ধার বা জব্দ করা হয়নি। এজাহারে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। কিন্তু তার কোনো বর্ণনা দেওয়া নেই। তাই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯২৩ সালের ৩ ধারা এ ঘটনার সঙ্গে যায় না। এটা একটি জামিনযোগ্য মামলা। তিনি একজন নারী, অসুস্থ। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি জামিনের কোনো অপব্যবহার করবেন না।
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন হিরন বলেন, পলাশী যুদ্ধের সময় ঘসেটি বেগমরা প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেছিল। এবার ‘রোজিনা বেগম’ গোপন তথ্য পাচার করে একইভাবে সরকারকে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্র করেন।
জবাবে রোজিনার আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখালেখি ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার কারণে তাকে শত্রু মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সব কর্মকর্তারা। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাই যে কোনো শর্তে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করা হোক।
জামিন শুনানি শেষে আদালত আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন। এর আগে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে শেষ হয় তার জামিন শুনানি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ মে দুপুরের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ মে আদালতে হাজির করে। একইসঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধিতে করা এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব ১৯ মে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। ডিবি বৃহস্পতিবার (২০ মে) জানিয়েছে, রোজিনার মামলার বিষয়ে তারা কোনো চাপে নেই। স্বাধীন তদন্ত হবে।