ব্রেকিং নিউজ
Home / রাজনীতি / হেফাজত নেতৃবৃন্দের সম্পদের উপর নজরদারি শুরু করেছে দুদক

হেফাজত নেতৃবৃন্দের সম্পদের উপর নজরদারি শুরু করেছে দুদক

 

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সম্পদের দিকে এবার নজরদারি শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংগঠনের সদ্যবিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকার লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও সম্পদের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন ও লাগামহীন অর্থ খরচের খবরও দুদকের নজরে এসেছে। সংস্থাটি তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তথ্যানুসন্ধান শুরু করেছে।
সব মিলিয়ে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউর তদন্ত শেষ হলে তাদের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করবে দুদক।
দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘মামুনুল হক তো ধরাই পড়েছেন। এমন তো নয় যে, তিনি বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবেন। তিনি তো আমাদের হাতেই আছেন। তার অপরাধের বিচার যত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব আমরা করব। এটা রাষ্ট্রের জন্য ভালো, মানুষের বিশ্বাসের জন্যও ভালো। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, অভিযোগ বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হচ্ছে। অভিযোগটি ব্যাপক আকারে হলেও এর সঙ্গে আরও নাম যুক্ত হলে একটি টিম গঠন করে অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানের পর অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। পরে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

দুদক সূত্র জানায়, হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী, নূর হুসাইন কাসেমী, মামুনুল হকসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের হিসাব কষছে বিএফআইইউ। তাদের ব্যাংক হিসাবের দিকেও দুদকের নজর রয়েছে।
হেফাজত নেতাদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করবে দুদক। দেশে-বিদেশে অর্থের জোগানদাতাদেরও চিহ্নিত করা হবে। এরই মধ্যে হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি)।
জানা গেছে, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট হেফাজতে ইসলামের নেতাদের অর্থ-সম্পদ, অর্থের উৎস, মানি লন্ডারিং ও অন্যান্য আর্থিক অপরাধ খতিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে তাদের বিত্ত-বৈভবের নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। ওইসব তথ্য যাচাই করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ মামুনুলের নানা অপরাধের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, দেশে আধিপত্য বিস্তারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বেআইনিভাবে তিনি অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সে অর্থ খরচ করে সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করা হয়েছে। ওইসব অর্থ নিজেদের ভোগ-বিলাসেও ব্যয় করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হেফাজত নেতাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে ও নানাভাবে অনুসন্ধানে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পাশাপাশি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনুসন্ধানে অগ্রসর হতে গেলে একটা ক্লু থাকা দরকার। সেটাই আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় যখন সম্পদ করা হয় বা সেই টাকা পাচার, স্থানান্তর, রূপান্তর করা হয়- তখন এটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। মামুনুল হকসহ হেফাজতের অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।
গত ৪ এপ্রিল বিএফআইইউ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্যান্য নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা টাকা, লেনদেনের হিসাবসহ যাবতীয় তথ্য চেয়ে সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
ব্যাংক হিসাব তলব করা অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইআতুল উলয়াও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ।