বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং নতুন ধরন নিয়ে উদ্বেগের কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশিদের হজে যাওয়া বন্ধ করার কথা ভাবছে সৌদি আরব। সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন।
তারা জানান, “বিদেশিদের হজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
এ পদক্ষেপ নেওয়া হলে মক্কায় হজ হবে সীমিত পরিসরে। সেক্ষেত্রে সৌদি নাগরিকদের মধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন বা অন্তত ছ’মাস আগে কোভিড–১৯ থেকে সেরে উঠেছেন, তারা হজ করার সুযোগ পেতে পারেন।
করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে ২৫ লাখের বেশি মানুষ সপ্তাহব্যাপী হজ পালন করতে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় যেতেন।
এছাড়া, সারা বছরই ওমরাহ পালন করতে নানা দেশ থেকে হাজার হাজার মুসলমান সৌদি আরবে যান। হজ থেকে সৌদি আরব প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে।
গত বছর প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর অক্টোবরে ওমারাহ পালনের জন্য সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম খুলে দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ এর টিকা বাজারে আসার পর গত মার্চে সৌদি আরব সরকার বলেছিল, যারা করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন কেবল মাত্র তাদের হজ করার অনুমতি দেওয়া হবে।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ধরন শনাক্ত হওয়া এবং সেগুলো মোকাবেলায় বর্তমানে বাজারে থাকা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়া কথা ভাবছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই কর্মকর্তা।
তারা বলেন, এবারও হয়ত শুধু সৌদি আরবে বসবাস করা ব্যক্তিদের হজের অনুমতি দেওয়া হবে এবং তাদেরও হয় টিকা গ্রহণ করতে হবে অথবা হজ শুরু হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে এ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠার সনদ দেখাতে হবে।
এ বছর অংশগ্রহণকারীদের বয়সের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তাদের একজন। এ বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের মিডিয়া কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এখনও বিশ্বের অন্তত ৩৫টি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৩৫ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন, ৩৩ লাখ ৫১ হাজারের বেশি মানুষ।
বর্তমানে ভারতে দৈনিক সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। মৃত্যুতেও রেকর্ড গড়ছে দেশটি। বলা হচ্ছে, নানা ধর্মীয় আয়োজনে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই অসংখ্য মানুষের জমায়েত এবং নির্বাচনী সমাবেশে ভিড়ের কারণেই দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এত মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
সারা বিশ্ব থেকে নানা ধর্মীয় আয়োজনে পূণ্যার্থীদের ভিড় এখন কোভিড সংক্রমণ বিস্তারের ‘হটবেড’ এ পরিণত হয়েছে।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতেই সৌদি আরব সরকার ২০টি দেশ থেকে সৌদ আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। তবে কূটনীতিক, সৌদি নাগরিক, চিকিৎসাকর্মী এবং তাদের পরিবার ওই নিষেধাজ্ঞার বাইরে ছিলেন।
এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, মিশর, লেবানন, ভারত এবং পাকিস্তান থেকে আসা মানুষদের উপর ওই নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।