“মেয়র সিস্টেম থাকলে জনগন ভোট দিয়ে পছন্দ মতো যোগ্য মেয়র নির্বাচন করবেন”
• তারা জনগনের কাছে পরাজয়ের ভয়ে লিডারশীপ সিস্টেমে ফিরে যেতে চাইছেন
• জনগনের ভোটের ক্ষমতা থাকলে অলস মেয়র সরিয়ে আসবেন যোগ্য মেয়র
গত ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক ভারচুয়েল সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে টাওয়ার হ্যামলেটসে ৬ মে-এর রেফারেন্ডামে মেয়রেল সিস্টেমের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানানো হয়েছে।এই সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, সরাসরি জনগনের ভোটে মেয়র নির্বাচনের সিস্টেম থাকলে-সাধারন মানুষ পছন্দ করে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পারবে। জবাবদিহী করতে পারবে। কোনো পার্টি, গ্রূপ বা ব্যক্তি যদি ব্যর্থ হয় তবে জনগনই ভোটের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দিতে পারেন। অন্যদিকে লিডারশিপ সিস্টেমে কিছু কাউন্সিলার মিলে একজন লিডার নির্বাচিত করেন, সেই লিডার জনগনের চেয়ে কাউন্সিলারদের কাছে বেশী দায়বদ্ধ থাকেন।
ইয়েস ফর মেয়রের ক্যাম্পেইন ওর্গনাইজার মাইয়ুম মিয়া-সংবাদ সম্মেলনের সূচনা করেন। মূল বক্তব্য রাখেন বারার প্রথম নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান। এছাড়া এতে যোগদেন এবং ক্যাম্পেইনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, ব্যারোনেস পলা উদ্দিন, সাবেক স্থানীয় লেবার পার্টি চেয়ার লিল কলিন্স, ক্যানারীওয়ার্ফ ভিত্তিক ব্যবসায়ী ও কনসারভেটিভ একটিভিস্ট মুকিম আহমদ ও শিক্ষাবিদ ড: হাসনাত হোসেন এমবিই।
সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান বলেন, ১০ বছর আগে ৬২ হাজার মানুষ ভোট দিয়ে মেয়র সিস্টেম চালু করেন। জনগনের কোনো দাবী ছাড়াই রেফারেন্ডাম দেয়া হয়েছে-এ কারনে যে বর্তমানে মেয়র ও তার কাউন্সিলাররা ভয় পাচ্ছেন আগামীর নির্বাচনী চ্যালেন্জ নিয়ে। অথচ মেয়র সিস্টেম না থাকলে সরাসরি ভোটে জনগনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকবে না। কারন-এ পর্যন্ত বর্তমান প্রশসান জনগনকে হতাশ করেছে ।যতো কাট করেছে দু একজন ছাড়া কোনো কাউন্সিরারকেও মেয়রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাড়াতে দেখা যায়নি। মেয়র কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়িছেন আর কমিয়েছেন জরুরী নানা সেবা। তা-ই তারা পরাজয়ের ভয়ে লিডারশীপ সিস্টেমে ফিরে যেতে চাইছেন। যাতে আর জনগনের দরজায় তাদের মেয়র নির্বাচনের নামে দাড়াতে না হয়। লুতফুর রহমান ভোটারদের শ্রদ্ধা জানান, তাকে ২০১০ সালে ২৫ হাজার এবং ২০১৪ সালে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে নির্বাচিত করার জন্য।
বৃটেনের প্রথম মুসলিম নির্বাচিত মেয়র লুতফুর রহমান তার ৫ বছরের সাফল্যেও কথা তুলে ধরে বলেন, মেয়র সিস্টেম ছিলো বলেই আমি আমাদের টিম বহু ভালো ও দীর্ঘ মেয়াদী কাজ করতে পেরেছে। আমরা নিজস্ব টাউন হল করার উদ্যোগ নিয়েছি, যার ফলে আজীবন বছরে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড সেইভ হবে। আমরা বারার মানুষের জন্য নিজস্ব কবরস্থান করেছি। ৫ বছর কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়াইনি। ৫৫জন অতিরিক্ত পুলিশ রেখেছি ড্রাগসহ নানা ক্রাইম কমিয়ে রাখার জন্য। ৫৫৯০ ঘর তৈরী করে সোস্যাল হাউজ নির্মানে একাধিবার সারাদেশে ১ম হয়ে পুরস্কৃত হয়েছি। স্কুল স্টুডেন্টদের এলাউন্স, ফ্রি স্কুল মিল ছাড়াও ইউনির্ভাসিটি গ্রান্টস করা সম্ভব হয়েছে মেয়র সিস্টেমের কারনেই। এখন কোনো অলস মেয়রের কারনে নির্বাচিত মেয়র সিস্টেমের দোষ হতে পারেনা। তাই আপনারা জনগনকে দেখিয়ে দিতে হবে, আপনারা ক্ষমতা আপনাদের হাতে রেখেছেন আর প্রয়োজনে অলস (লেজি) মেয়র সরিয়ে যোগ্য মেয়র নির্বাচন করেছেন।
ব্যারোনেস পলা উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত মেয়র সিস্টেমের মাধ্যমে বহুজাতিক সমাজ থেকে প্রতিনিধিত্ব তৈরী হওয়ার সুযোগ থাকে। একজন নির্বাহী মেয়রের মাধ্যমে একটি প্রশাসনে স্থিতিশীলতা থাকে, কিন্তু এক ব্যক্তির ব্যর্থতার জন্য পুরো সিস্টেম দায়ি হতে পারেনা। আমাদেরকে জনগনের ক্ষমতায়নের এই সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতির মেয়রের পক্ষে থাকতে হবে।
লিল কলিন্স বলেন, প্রায় চার দশক থেকে এই বারায় থাকি। নিজে যুগের পর যুগ বন্ধ থাকা পপলার বাথের জন্য লিডারদের সাথে কথা বলেছি, সভা করেছি। কোনো কাজ হয়নি। মেয়র সিস্টেম এলে ১ম মেয়র লুতফুর রহমান আমাদের কথা দেন এবং নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন।
কনসারভেটিভ একটিভিস্ট মুকিম আহমদ বলেন, ৪৫ বছর থেকে আমি টাওয়ার হ্যামলেটসে ব্যবসা করি এবং বারার একজন ভোটার। ২০১০ সালেও আমি নির্বাহী মেয়র সিস্টেমের পক্ষে ভোট দেই এবং এবারও দেবো। কারন লিডারশীপ সিস্টেমে ফিরে গেলে কাউন্সিলররা লিডার সিলেক্ট করবেন তখন জনগনের কাছে জবাবদিহীতা কমে যাবে।
ড: হাসনাত হোসেন এমবিই বলেন, জনগনের আশা আকাংখা বিবেচনা করেই মেয়র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেবেন, নির্বাচিত হয়ে সেটি তিনি বাস্তবায়ন করবেন। না করলে জনগন তাকে বদলে আরেকজনকে মেয়র নির্বাচনের ক্ষমতা রাখবেন।
মেয়র সিস্টেমের পক্ষের আরো বক্তব্য রাখেন এবং ক্যাম্পেইনে সমর্থন জানিয়ে সক্রিয় রয়েছেন কউিনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী,সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ,ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সমাজ কমী এনিটা সাবক, জন ক্রে, সাবেক নার্স ক্লেয়ার রফা ও শিক্ষক নেতা আবু হোসেন, কাউন্সিলার হারুন মিয়া, চ্যারিটি একটিভিস্ট আতিয়া বেগম, কমিউনিটি একটিভিস্ট নেসটা অডিগবো, চাইনিজ কমিউনিটি একটিভিস্ট ওয়ান এলারজি ও সাবেক আর্মি অফিসার জুলিয়ান স্কট, সোমালী কমিউনিটি একটিভিস্ট হামজা জে-সহ আরো অনেকে।
কমিউনিটি নেতা কে এ আবু তাহের চৌধুরী বলেন, লিডারশীপ সিস্টেমের ক্যাম্পেইন লিফলিটে শহীদ মিনারের ফোটো ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ শহীদ মিনার হচ্ছে মহান ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। আর এই মেয়র আর কাউন্সিলাররা বাংলা ভাষার স্কুল তথা সিএলএস সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। এই হচ্ছে দ্বৈত নীতির পরিচয়।
শিক্ষক নেতা আবু হোসেন বলেন, মেয়র সিস্টেম রেখে একজন যোগ্য মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। যতো জনস্বার্থ বিরোধী পলিসি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে।
ক্লেয়ার রফা বলেন, আমি সরল ভাবে মনে করি আমার ভোট দিয়ে বারার প্রধান নির্বাচিত হবেন। আমি যাকে পছন্দ করি তাকে নির্বাচিত করতে চাই। বর্তমান মেয়রের প্রতি আমি খুব দু:খিত তাই নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে সরাতে চাই।
সমাজ কর্মী এনিটা সাবক বলেন, নির্বাচিত মেয়র হলে আমরা তার কাছে আমাদের নানা ইস্যু নিয়ে যেতে পারবো। আমাদের কাছে ভোট এবং নির্বাচিত করার স্বাধীনতা থাকবে। আমরা তাকে জবাবদিহী করতে পারবো।
০০০০