হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার পিতাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় দলটির দুই নেতাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ২নং গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরি নং-৫৭৪।
জানা গেছে, জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়ার রহমান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিতে জড়িতদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ার বিষয়টি গোপন রাখা এবং কেন তাকে দলের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে না- জানতে চেয়ে গত ১২ এপ্রিল কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
সাধারণ ডায়েরিতে আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম খান উল্লেখ করেন, ওলিয়ার রহমানের পরিবারবর্গ হেফাজতের সঙ্গে জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকায় গত ১২ এপ্রিল ওলিয়ার রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই নোটিশ দেওয়ার পর দিন ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু করে সাতটার মধ্যে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ০০৩৯৩২৯১০৭৪১৮০, +৬০১১১৬৭০৪৮৪০, +৩৭০৫৭৭৯ নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে কল করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এছাড়া একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে +৩১৩২৬৫৫ নম্বর থেকে ফোন করে মামুনুল হক পরিচয় দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় আইনের সাহায্য চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওলিয়ার রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় আমার ব্যক্তিগত মোবাইলে মামুনুল হক পরিচয় দিয়ে ফোন দেন। আমাকে গালিগালাজ এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয় ‘তোর মনে যা খেতে চায় তাই খেয়ে নে, আর বেশি দিন বাঁচতে পারবি না’।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি মো. ওলিয়ার রহমান, গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আপনার বড় জামাতা মো. হাবিবুর রহমান, মেজ জামাতা অর্থাৎ জান্নাত আরা ঝর্ণার সাবেক স্বামী মো. জাফর শহিদুল ইসলাম, সর্বাধিক সমালোচিত আপনার মেজ মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার কথিত স্বামী মো. মামুনুল হকসহ সবাই উগ্রপন্থী ইসলামি সংগঠনের (হেফাজতে ইসলাম) সঙ্গে জড়িত। আপনার মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণা অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত। এমনকি আরও জানা যায় যে, আপনার স্ত্রীও জামায়াতপন্থী’।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালিয়ার রহমানকে কেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার সপক্ষে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।’
এদিকে ঝর্ণার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওলিয়ার রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তিনি বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিবারের অন্যরা কোনও কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।