পাহাড়ে আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বৈসাবি উৎসব। আজ চাকমাদের ফুলবিজু। এ উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন নদী, ছড়া ও ঝরনায় ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
চাকমারা বিশ্বাস করেন, বুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালিয়ে আর ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করলে পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছরে সুখ–শান্তি আসে। যুগ যুগ ধরে চাকমারা এই সামাজিক উৎসব পালন করে আসছেন। তবে এবার সবার প্রার্থনা করোনামুক্ত সুস্থ আর স্বাভাবিক পৃথিবীর।
পানছড়ি রাবার ড্যাম এলাকায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ফুল ভাসাতে এসেছেন অনুপম চাকমা (৭৮) নামের এক প্রবীণ। তিনি বলেন, কষ্ট করে হলেও তিন কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন মনের শান্তি জন্য। করোনামুক্ত পৃথিবীর জন্য তিনি প্রার্থনা করেছেন।
প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল ভাসানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তবু সকাল থেকে পানছড়ি রাবার ড্যাম ও খাগড়াছড়ি খবংপুড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর পাড়ে শত শত তরুণ-তরুণী ফুল ভাসাতে চলে আসেন।
রাবার ড্যাম এলাকায় ফুল ভাসাতে আসা প্রিসিলা চাকমা, তেরেসা চাকমা ও গ্লোরী চাকমা বলেন, গত বছরও বিজুর দিনে ফুল ভাসাতে পারেননি। সারা বছর মনে মনে একটা আপেক্ষ ছিল। এবার তাঁরা তাই ফুল ভাসাতে এসেছেন। প্রার্থনা করেছেন করোনামুক্ত পৃথিবীর জন্য।
উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, মারমা আর ত্রিপুরারা বিজু ফুল, সাদা রঙ্গন দিয়ে ঘর সাজিয়েছেন। বয়োজ্যেষ্ঠরা বাড়িঘর ও আঙিনায় সোনা–রুপার পানি দিয়ে আসবারপত্র পরিষ্কার করেছেন। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনা, গোয়ালঘরে এবং নদী বা ছড়ার পাড়ে মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় প্রথম দিনের কাজ।
অন্যদিকে, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকে দলে দলে যাচ্ছেন মাথাইকুড়ি বা দেবতাপুকুরে। দেবতাপুকুরটি মহালছড়ি উপজেলায় মাইসছড়িতে অবস্থিত। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস, এটি দেবতাদের খনন করা পুকুর। তাই প্রতিবছর ত্রিপুরারা বৈসু উপলক্ষে এই পুকুরে যান গোসল করতে। এই পুকুরে গোসল করলে পাপমোচন হয়, এটা তাঁদের বিশ্বাস।