বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ টিকা নিয়েছে। টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র বা ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ চালু করা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে।
টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র হিসেবে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ এর আদৌ কোনো দরকার আছে কিনা এক প্রতিবেদনে তা খোঁজার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন।
দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র থেকে (সিডিসি) টিকাগ্রহণের পর একটি দেওয়া হচ্ছে। যদিও কার্ডটির এর নকল বানানো খুবই সহজ। সেই প্রেক্ষাপটেই জাতীয় পাসপোর্টের মতো ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর প্রসঙ্গ এসেছে।
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট আসলে কি?
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট হবে কোভিড-১৯ এর টিকাগ্রহণের প্রমাণপত্র, যেটা স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন হতে পারে, বা যাদের স্মার্টফোন নেই তাদের জন্য হতে পারে লিখিত সনদ।
ভ্যাকসিন পাসপোর্টধারী যে কোনো স্থানে যেমন জনাকীর্ণ কনসার্ট- প্রবেশের সুযোগ পাবেন অন্য একটি দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন, যার জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসার পাশাপাশি টিকাগ্রহণের প্রমাণ দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলতে চাইছেন, টিকাগ্রহণের এ ধরনের প্রমাণপত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার একটা উপায় হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে যেমন ব্যক্তি মানসিক স্বস্তিও অনুভব করবেন, জনাকীর্ণ স্থানগুলোও আরেকটু নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
নিউ ইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজ্য, যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএমের ‘এক্সেলসিওর পাস’ অ্যাপ ব্যবহার করে ‘ডিজিটাল ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ চালু করা হয়েছে। অ্যাপটিতে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির ‘কিউআর কোড’ প্রদর্শিত হয় যা, ওই ব্যক্তির টিকাগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
মার্চেই ব্রুকলিন নেটসের একটি বাস্টেটবল ম্যাচ ও নিউ ইয়র্ক রেঞ্জার্সের হকি ম্যাচে এই অ্যাপের কার্যকারিতার পরীক্ষা চালিয়েছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ।
তবে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও কর্তৃপক্ষের খবরদারির বাড়াবাড়ির আশঙ্কা তুলে ধরে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ চালুর বিরোধিতা করছেন অনেকে।
এরই মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গোপনীতা রক্ষার কথা তুলে ধরে এ ধরনের পাসপোর্টে নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি দিয়ে ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের গভর্নর নির্বাহী
এই দুই রাজ্যে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের জন্য ভ্যাকসিন পাসপোর্টের মতো কিছু সরবরাহ করতে পারবে না।
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট কে দেবে?
কোন কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ও আলোচনা চলছে। জো বাইডেন প্রশাসন টিকাগ্রহণের সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড তৈরি করতে চাইছে।
তবে সরকার ভ্যাকসিন পাসপোর্ট দেবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন পস্যাকি।
টিকাগ্রহণ যাচাইয়ের মাধ্যম উদ্ভাবনের জন্য মাইক্রোসফট ও মায়ো ক্লিনিকের মতো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানিগুলোকে এরই মধ্যে ‘দ্য ভ্যাকসিনেশন ক্রেডেনশিয়াল ইনিশিয়েটিভ (ভিসিআই)’ নামে একটি জোট গঠন করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে জোট ঘোষণার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিসিআইয়ের লক্ষ্য হলো- টিকাগ্রহণের ‘এনক্রিপটেড ডিজিটাল কপি’ পাওয়ার ব্যবস্থা করা, যেটা পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষণ করা যাবে।
যাদের স্মার্টফোন নেই, তাদের জন্য থাকছে কাগজে কিউআর কোড নেওয়ার ব্যবস্থা, যেখানে ডব্লিউথ্রিসি যাচাই করার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানানো হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পছন্দ হোক আর নাই হোক। বিদেশ ভ্রমণেচ্ছুদের জন্য সম্ভবত দ্রুতই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু হতে যাচ্ছে।
এ ধরনের পাসপোর্ট ভ্রমণকারীকে নির্দিষ্ট দেশে প্রবেশের অনুমতি অথবা কোয়ারেনটাইন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
ইসরায়েল এরই মধ্যে একটি ভ্যাকসিন পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু করেছে, যা এর বাহককে রেস্তোরাঁ ও ব্যয়ামাগারে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে বলা হয়, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর পরিকল্পনা করছে। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও সুইডেনও তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।