জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমান এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যাগুলো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চীনা সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত মানবাধিকার চর্চা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে ‘গণহত্যা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ দিকে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জিনজিয়াংয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ গণহত্যা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো মানবাধিকার বিষয়ক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হলো। খবর ফিন্যান্সিয়াল পোস্টের
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলমান এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যাগুলো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বছরজুড়ে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।’
চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াংয়ে যেসব অপরাধ করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ১০ লাখেরও বেশি বেসামরিক ব্যক্তিকে নির্বিচারে কারাবন্দি রাখা বা শারীরিক স্বাধীনতা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত করা; জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, জোরপূর্বক গর্ভপাত ও চীনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার আরও কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করা; ধর্ষণ; নির্বিচারে আটককৃতদের একটি বড় অংশকে নির্যাতন; জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ এবং ধর্ম বা বিশ্বাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই তদন্ত করার ঘোষণা দেয়, তবে তারা পুলিশের কুকর্মের বিষয়ে করা সেই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে না বা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানায় না।’
বিভিন্ন ইস্যুতে চীন ও পশ্চিমাদেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা যখন ক্রমেই বাড়ছে, ঠিক সেই সময়েই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চীনের সরকার ও তাদের বিভিন্ন এজেন্টের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ও বেআইনিভাবে হত্যাকাণ্ডের অনেক অভিযোগ ওঠে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব অভিযোগের বিষয়ে খুব অল্প তথ্য পাওয়া যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো তথ্যই মেলে না।’
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চীনা সরকার জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের পাশাপাশি কাজাখ ও কিরজিগ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকজন এবং অন্যান্য মুসলমান ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকজনকে নির্বিচারে আটক করে রাখছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সোফি রিচার্ডসন বলেন, ‘প্রতিবেদনে গণহত্যা শব্দটির ব্যবহার উইঘুর, কাজাখ, কিরগিজ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চীনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশাসনের গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত বহন করে।’
তার মতে, পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে একটি স্বাধীন তদন্তে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কৌশল প্রণয়ন, প্রমাণ সংগ্রহ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
London Bangla A Force for the community…
