নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টে নারীসহ হেফাজত নেতাকে ঘেরাওয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
রোববার দুপুরে সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে লাঞ্ছিত করার এই অভিযোগ দায়ের করেন মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী নামের এক যুবক।
অভিযোগে মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবীর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়া হয়নি।
শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঘেরাও করে স্থানীয়রা।
পরে ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হেফাজতের কর্মীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
রাত ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে সড়ক অবরোধ করে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে বিশ্রামের জন্য সস্ত্রীক হোটেলে অবস্থান গ্রহণ করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। তিনি হোটেলের সম্পূর্ণ নিয়ম কানুন মেনে অবস্থান করছিলেন।
ওই সময় হোটেল মালিক সাইদুর রহমানের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা মামুনুল হককে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে হামলাকারীদের মধ্যে দুই জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, “এলাকার কতিপয় সন্ত্রাসী সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী শাহ মো. সোহাগ রনির নেতৃত্বে কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে আল্লামা মামুনুল হকের ওপর হামলা চালায়।”
হামলাকারীরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেন এবং তার গাড়ির চাবি ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
এই বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “মামুনুল হককে হেনস্থা করার অভিযোগ এনে তার পক্ষে স্থানীয় দুই জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, রিসোর্টে হামলা, ভাংচুর, মহাসড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।
এই বিষয়ে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মো. সোহাগ রনির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রোববার সকালে রয়েল রিসোর্টের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
রোববার সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনাসহ মোদীর সফর ঘিরে হেফাজতের সহিংসতার সমালোচনা করেন।
রিসোর্টে মামুনুলের সঙ্গে থাকা নারীকে পার্লারে কাজ করা এক মহিলা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“পার্লারে কাজ করা এক মহিলা। তাকে আবার এখন এদিকে তার বউ হিসেবে পরিচয় দেয়, আবার নিজের বউয়ের কাছে বলে যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলে ফেলেছি।”
শনিবার দুপুরে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টের ৫ম তলার ৫০১ নম্বর রুমে এক নারীসহ ওঠেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। বিকালে স্থানীয় লোকজন ওই রুমে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এসময় মামুনুল ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন। স্থানীয় লোকজনের হাতে মামুনুল হক অবরুদ্ধের খবরে পুলিশ ও সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) অন্যরা সেখানে।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হেফাজতের নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার কয়েকশ ছাত্র রয়েল রিসোর্টে হামলা চালায় এবং মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় তারা রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
রাত ৮টার দিকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে ভাংচুর চালায়। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে। মোগড়াপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুরও চালানো হয়। এছাড়া, রাতে সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মো. সোহাগ রনির বাড়িতে ভাংচুর করে।
রাত ১০টার দিকে পুলিশ বিজিবি গিয়ে শটগান ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।