বিরোধী দলের আজকের ঢাকামুখী অভিযাত্রায় বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। যেকোনো ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় রাজধানীর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তায় বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, সচিবালয়, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, ব্যাংক ও পেট্রোল পাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটাতে পারে বলে সরকারের কাছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে। জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকা ও প্রবেশ পথগুলো নিরাপত্তার জালে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসা থেকে বের হতে দেয়া হবে না বলে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যে আজকের ঢাকামুখী অভিযাত্রা কর্মসূচি সামনে রেখে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তায় বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি র্যাবের ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াদ, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, ডিবিসহ পুলিশের সাদা পোশাকের টিম ভোর থেকে মাঠে থাকছে। নাশকতাকারীদের তাত্ক্ষণিক সাজা দিতে আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম চালাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও এর প্রবেশপথে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। কাউকে আসতে বা যেতে দেওয়া হবে না। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ও এর আশপাশে লোক জমায়েত হতে দেওয়া হবে না। ভোর থেকেই কাউকে রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। দুই/তিনজন জড়ো হলেই জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহভাজন হলে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পেট্রল বোমা কিংবা হাতবোমায় আক্রমণের সন্দেহ হলেই গুলি চালাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ডিএমপির ৪৯টি থানায় মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এনজিওসহ জামায়াতের স্মৃক্ত প্রতিষ্ঠানের দিকে কড়া নজরদারি থাকছে। ফজরের নামাজের পর আকস্মিকভাবে তারা যাতে রাস্তায় নেমে আসতে না পারে, সেজন্য সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার নাশকতাকারীদের সঙ্গে কোনো প্রকার আপস নেই জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার পুলিশ সদর দফতরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নাশকতাকারীদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। জননিরাপত্তার স্বার্থে আইনের মধ্যে থেকে যা যা করণীয় তাই করবে পুলিশ। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বলেন, যেহেতু ডিএমপি এ সমাবেশে অনুমতি দেয়নি, তাই এ সমাবেশ অবৈধ। আমরা প্রথমত চাই না এ অবৈধ সমাবেশে কেউ যোগ দিক। তারপরেও যারা এ সমাবেশে যোগ দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, গাছ কেটেছে, নাশকতা করেছে, তারাই আবার ঢাকায় এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। পুলিশ তাদের সুযোগ দেবে না। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে অন্তত হাজারখানেক সিসিটিভি ও গোপন মুভি ক্যামেরা। রাজধানীতে উঁচু ভবনের ছাদে বসছে অন্তত একশ ওয়াচ টাওয়ার। আর ঢাকার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি। রাজধানীর অন্তত ২শ জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকছে আমেরিকার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম বিশেষায়িত দল সোয়াট। এর পাশাপাশি থাকছে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক বোম্ব ডিসপোজাল টিম, র্যাবের ডগ স্কোয়াড, সাদা পোশাকের অন্তত ১০টি মহিলা গোয়েন্দা দল ও আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ১০টি টিম মাঠে থাকছে। এছাড়া মহিলা পুলিশের অন্তত ১০টি টিম মাঠে থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে। আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম ছাড়াও থাকছে একাধিক সিভিল টিম। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকায় বসানো হয়েছে হাজার খানেক সিসিটিভি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বাইরে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। এদিকে শুক্রবার থেকেই রাজধানীতে সব ধরনের আতশবাজি বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করেছে পুলিশ। অনুষ্ঠান স্থলগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজরদারি করবে। এছাড়া হোম পার্টির নামে বাণিজ্যিকভাবে মদ বা অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রির ওপর শুক্রবার রাত থেকেই নিষেধাজ্ঞা বলবত্ আছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের ডিজে পার্টি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নাশকতাকারীদের তাত্ক্ষণিক সাজা দিতে ৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকছে। মাসুদুর রহমান আরও বলেন, রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশপথে কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকবে তারা। এর মধ্যে গাবতলী, আমিনবাজার, বসিলা, কামরাঙ্গীর চর, খোলা মোড়া, সোয়ারীঘাট, ইমামগঞ্জ, বাবুবাজার, বাদামতলী, সদরঘাট, শ্যামবাজার, মিলব্যারাক, পোস্তগোলা, কাঁচপুর, শনিরআখড়া, শ্যামপুর, ডেমরা, উত্তরা-টঙ্গী ব্রিজের উভয় পাশ, দুই বুড়িগঙ্গা সেতুর উভয় প্রান্ত, বসিলা সেতুর উভয় প্রান্ত, আজমপুর, উত্তরা-আশুলিয়া-মিরপুর বেরিবাঁধ সংযোগস্থান, মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর, মিরপুর-১৪ নম্বর, কাকলী, খিলক্ষেত বিশ্বরোড, রামপুরা টিভি সেন্টার, খিলগাঁও রেলক্রসিং, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শাহজাহানপুর ক্রসিং, কমলাপুর রেলস্টেশন, গুলশান ১ ও ২ নম্বর, শাহজাদপুর, আজিমপুর, ফায়ার সার্ভিসের পাশের গলি, বংশাল, রায়সাহেব বাজার, ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা, বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা, নীলক্ষেত, শাহবাগ, বাংলামোটর, বিমানবন্দরের সামনের সড়ক, পল্টন মোড়, টিএসসি, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, ফার্মগেট, আগারগাঁও, শ্যামলী, কালসী রোডের উভয় প্রান্ত, মিরপুর বাংলা স্কুল, শেওড়াপাড়া, আনসার ক্যাম্প, আসাদ গেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা, গ্রিনরোডের উভয় মাথা, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, সাতরাস্তা মোড়, সাত মসজিদ, নাবিস্কো মোড়, মহাখালী রেলক্রসিং, মগবাজার, কাকরাইল, মালিবাগ মোড় এবং মালিবাগ চৌধুরী পাড়াসহ ৩ শতাধিক স্পটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে থাকবে। পুলিশ জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিরাপত্তার জন্যও পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন থাকবে। তারা টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং পানিবাহী গাড়ি নিয়ে সজ্জিত থাকবে। পানিবাহী গাড়িতে গরম এবং বরফ দেয়া প্রচন্ড ঠাণ্ড পানি থাকবে। জানা গেছে, সচিবালয়, প্রেসক্লাব, ফকিরাপুল ও নাইটিঙ্গেল মোড়সহ আশপাশের সড়কে দুই পাশ ঘিরে থাকবে পুলিশ। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে অবস্থান নিয়ে থাকবে পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি ও জলকামান। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ এমনকি নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা করে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটার পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ একাধিক জঙ্গি সংগঠন। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ঘটিয়ে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেয়ার চেষ্টা চালাতে পারে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের একটা অংশ এই অভিযাত্রাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারে।