রাশেদুজ্জামান এর বিরুদ্ধে আইজিপি বরাবরে অভিযোগ করায় যুবলীগের এক স্থানীয় নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় তুলে এনে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিত ওই নেতার নাম গোলাম মোস্তফা। তার পায়ুপথসহ পুরো পশ্চাদ্দেশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। থানা হাজতে মারধরের ওই ঘটনায় গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রত্না আক্তার বাদী হয়ে উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ময়মনসিংহ রেঞ্জ বরাবরে এ ঘটনার বিচার চেয়ে ওসির বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। একই অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি। গত ৪ জুনের ওই ঘটনায় গত সোমবার (৮ জুন) ডিআইজির কাছে ওই অভিযোগ দায়ের করেন রত্না আক্তার। তবে ওসির দাবি, গ্রেফতারের সময় দোতলা থেকে লাফ দিতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন গোলাম মোস্তফা। তাকে কোনও নির্যাতন করা হয়নি।
গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রত্না আক্তারের অভিযোগ, গত ৪ জুন কেন্দুয়া উপজেলার সাউদপাড়া এলাকার এনামুলের বাড়িতে দুজন পৌর কাউন্সিলর, একজন ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন পূর্বের পাওনা টাকা পরিশোধ বিষয়ে একটি শালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাদের উপস্থিতির খবর পেয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান পুলিশ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হলেও ওসি সালিশে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগ তোলেন এবং তাদের গ্রেফতার করে টাকাসহ থানায় নিয়ে আসেন। পরে ৩ জন জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ৯ জনকে জুয়া খেলার অপরাধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেন।
পাশবিক প্রহারের শিকার যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা
রত্নার অভিযোগ, ওই শালিসে গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী গোলাম মোস্তফা-যিনি এই ওসির নামে এর আগে পৃথক ঘটনায় আইজিপি বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ফলে মূলত তাকেই হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে অন্যদের সঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থানা হাজতে ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটাতে মোস্তফার ওপর নির্মম নির্যাতন করে ওসি রাশেদুজ্জামান।
রত্না আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের ঘটনার কারণে তার স্বামী গোলাম মোস্তফার ওপরে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে থানার হাজত থেকে বের করে এক এএসআই এর কক্ষে নিয়ে গিয়ে তার স্বামীকে অমানুষিক নির্যাতন করেন ওসি রাশেদুজ্জামান। তার স্বামীর পশ্চাদ্দেশে মারতে মারতে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এমন মার মারেন যে পায়ুপথের পাশেসহ পুরো পশ্চাদ্দেশে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে। এছাড়াও তার সারা গায়েই নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। পরে এই নির্যাতনের ছবি তিনি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দেন।
তিনি জানান, পুলিশের দায়ের করা জুয়া খেলার মামলায় গ্রেফতারকৃতরা নেত্রকোনা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি নেন। এ সময় মোস্তফা আদালত প্রাঙ্গণে মারধরের আঘাত সইতে না পেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে জরুরি ভিত্তিতে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে গোলাম মোস্তফা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার শ্রদ্ধানন্দ নাথ গোলাম মোস্তফার হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তার পায়ুপথের আশপাশসহ গোটা পশ্চাদ্দেশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার খবর পেয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ফখরুজ্জামান জুয়েল গোলাম মোস্তফাকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযোগকারী রত্না আক্তার বলেন, তার স্বামী গোলাম মোস্তফা একজন সহজ সরল মানুষ। ওসি’র বিরুদ্ধে ডিআইজি স্যারের কাছে তিনি অভিযোগ করছিলেন। তাই ওসি বিভিন্ন সময় আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছিল মারধর করার। কিন্তু, এভাবে যে জুয়া খেলা সাজিয়ে তাকে অমানুষিক ভাবে মারধর করবে সেটা ভাবতে পারিনি। আমি এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানার ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
কেন্দুয়া পৌর সভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও বর্তমান ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল কাইয়ুম ভূইয়া বলেন, আমরা ওইদিন একটা পাওনা টাকার লেনদেন করতে ওখানে বসেছিলাম। পরে ওসি সাহেব এসে সবাইকে থানায় নিয়ে গেলো তাস খেলার নাটক সাজিয়ে। এরপর হাজত খানায় তিন জনপ্রতিনিধিসহ ৯ জনকে আটকে রাখেন। পরে ঘণ্টাখানেক পর ওসি রাশেদুজ্জামান হাজত থেকে মোস্তফাকে বের করে থানার এএসআই এর কক্ষে নিয়ে যায়। পরে ওই কক্ষ থেকে মোস্তফার আর্ত চিৎকার শুনতে পাই। ওখানে ওকে (মোস্তফা) বেধড়ক মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করলে মোস্তফা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ওই অবস্থায় কনস্টেবলরা মোস্তফাকে হাজতে রেখে যায়। সারা রাত মোস্তফার জ্ঞান ফেরেনি। সকালে মোস্তফা রাতের নির্যাতনের কথা বলে। এছাড়াও মোস্তফাকে হাজত থেকে বের করার সময় ওসি রাশেদুজ্জামান ওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার শিক্ষা দেবেন বলেও শাসিয়ে যান।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, এটা ভিত্তিহীন। তাকে ধরার সময় দোতলার ছাদ থেকে সে পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। পরে আমরা তাকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হয় । সে সময় তো বিচারকের কাছে সে কিছু বলেনি।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি জানান, এমন একটি অভিযোগ আমার কাছে ও ডিআইজি স্যারের অফিসে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দুই জায়গাই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সেজন্য যৌথভাবে একটি তদন্ত দল বিষয়টি তদন্ত করবে। প্রমাণিত হলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ওসি রাশেদুজ্জামান বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়ে তুলে এনে নির্যাতন করেন স্থানীয়দের এমন অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অভিযোগ এনে আইজিপি বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা। এরপর স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানও ওসি রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ করেন। গোলাম মোস্তফার স্ত্রীর দাবি, সে অভিযোগে সাক্ষী হিসেবে গোলাম মোস্তফার নাম থাকায় তাকে বিভিন্ন সময় শাসিয়ে ছিলেন ওসি। সময় হলে দেখে নেবেন এমন হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
London Bangla A Force for the community…
