ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে ঘুষ প্রস্তাব দেওয়ায় একই সংস্থার যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেনকে অন্যত্র বদলির জন্য অনুরোধ করে পাঠানো চিঠির হদিস মিলছে না। আটদিন আগে পাঠানো পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) লেখা চিঠিটি এখনো পৌঁছেনি বলে জানা গেছে। চিঠিটি কোথায় আটকে আছে, প্রশ্ন উঠেছে বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে। এনিয়ে কানাঘুষাও চলছে পুলিশের নানা পর্যায়ে।
দুর্নীতিপরায়ণ এমন কর্মকর্তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান।
পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাণ্ডে সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত হলেও ঘটনাটিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
সম্প্রতি ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন সরাসরি কমিশনারকে ঘুষের প্রস্তাবে দেয়। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় পুলিশের শীর্ষ মহলে। চৌকস ও মেধাবী অফিসার হিসেবে পরিচিত ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ঘুষের এমন প্রস্তাবে অনেকটা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন। যুগ্ম কমিশনারের কাছ থেকে ঘুষের প্রস্তাবের বিষয়টি তিনি গোপন রাখেননি।
গত ৩০ মে ইমাম হোসেনকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি বরাবর চিঠি দেয় কমিশনার। কিন্তু আটদিনেও সেই চিঠি পৌঁছাইনি পুলিশ সদরদপ্তরে।
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্মুখ সারিতে কাজ করছে পুলিশ। তারা ব্যাপক সুনামও কুড়িয়েছে। এসময় দুর্নীতির এমন ঘটনায় বাহিনীটির ভাবমূর্তিকে কিছুটা হলেও সংকটে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যেখানে যে ধরনের দুর্নীতি থাকুক না কেন সেটা যেন যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জনসম্মুখে আনা হয়।’
সাবেক এই পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- পাকিস্তানিরা এই দেশকে লুট করে সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে গেছে। শুধু রেখে গেছে কিছু চোরের দল কিছু চাটার দল। এই সমস্ত চোরের দল বছরের পর বছর ধরে বংশবিস্তার করছে এবং দেশকে গ্রাস করে খাচ্ছে। এই দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
টিআইবির ইফতেরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির এমন সংবাদ গণমাধ্যমে ফলাও করা প্রচারিত হলেও ওই কর্মকর্তার (ইমাম হোসেন) বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে চিঠি কেন পৌঁছালো না এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। একই শহরেই দুটো অফিস। সেখানে চিঠি দেরি এটা সন্দেহজনক। এখানে দুরসন্ধীমূলক কোনো কিছু কাজ করছে কিনা তা সদরদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের খতিয়ে দেখা উচিত।’
চিঠিটি পৌঁছেছে কিনা জানতে শনিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি আজও কাগজ পৌঁছাইনি। চিঠি আসলে অবশ্যই গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে।’
কেন এই অভিযোগ?
গত ৩০ মে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) ইমাম হোসেনকে অন্য জায়গায় বদলির বিষয় উল্লেখ করে কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আইজিপি বেনজীর আহমেদকে দাপ্তরিক চিঠি দেন।
ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উপযুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। ডিএমপির বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তদুপরি তিনি ডিএমপির কেনাকাটায় স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের কাছে পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ফলে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে কর্মরত রাখা সমীচীন নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
এমতাবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র বদলি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।’ গুরুতর এ বিষয়টি ডিআইজিকেও (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ইমাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না তোলায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
২০১২ সালে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে ইমাম হোসেন পদায়ন নিয়ে আসেন। পরে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিএমপির ডিসি (অর্থ), ডিসি লজিস্টিকস এবং বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে একই দপ্তরে যুগ্ম কমিশনার হয়েছেন।
Credit: ঢাকাটাইমস