ব্যারিস্টার নাজির আহমদ ::
অক্সিজেন ছাড়া আমরা চলতেই পারবো না। কোন একজন ব্যক্তির করোনাভাইরাস বা অন্য কোন কারনে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়ে যখন তিনি অক্সিজেন নিতে পারেন না, তখন ভেন্টিলেটরের মাধ্যমেই অক্সিজেন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। অক্সিজেন ছাড়া আমরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃতূবরন করবো। এখন চিন্তা করুন পৃথিবীর সাড়ে সাত শত কোটি মানুষকে মহান মা’বুদ একেবারেই ফ্রী অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু আমাদেরকেই নয়, পৃথিবী সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্য়ন্ত এভাবে ফ্রি অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন। আল্লাহু আকবার।
পানির আরেক নাম জীবন। আমরা পানি ছাড়া বাঁচতেই পারব না। পৃথিবীতে পানি প্রায় দুই তৃতীয়াংশের উপর। চিন্তা করুন – সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের পানি নুনা। অথচ পুকুর, খাল, বিল ও নদী-নালার পানি মিঠা। আবার সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের পানি যখন বাস্প/মেঘ হয়ে বৃস্টি আকারে আসে বা মাটিতে পড়ে তা তখন মিঠা পানি হয়ে যায়! যদি পুকুর, খাল, বিল, ও নদী-নালার পানি মিঠা না হয়ে নুনা হতো, তাহলে গাছ, উদ্ভিদ, লতা-পাতা কিছুই বাচঁতো না। আবার বৃস্টির পানি ও মাটির নীচ থেকে উত্তোলিত পানি যদি মিঠা না হয়ে নুনা হতো বা থাকতো আমরা তা খেতেই পারতাম না, জীবন বাঁচানো তো দুরের কথা। আল্লাহু আকবর। মহান আল্লাহপাক সুরা আররাহমানে ৩১ বার বলেছেন “তোমরা আমার কোন নিয়ামত অস্বীকার করতে পারবি?” আলহামদুলিল্লাহ – সমস্থ প্রশংসা মহান আল্লাহপাকের।
আগেই উল্লেখ করেছি, পৃথিবীতে সাড়ে প্রায় সাত শত কোটি মানুষ। কত হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষ পৃথিবী সৃস্টির পর বিগত হয়ে গেছেন। আরও কত হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীতে আসবেন এবং চলে যাবেন। অগনিত সব মানুষের মোটামুটি ৫০ ভাগ পুরুষ আর ৫০ ভাগ নারী। কিন্তু নারীদের কন্ঠ পুরুষদের কন্ঠ থেকে সম্পূর্ন আলাদা। শুধু তাই নয় একজন পুরুষের কন্ঠের সাথে আরেকজন পুরুষ বা একজন নারীর সাথে আরেকজন নারীর কন্ঠের হুবহু মিল নেই। একজন মানুষের চেহারার সাথে আরেকজন মানুষের চেহারার সম্পূর্ন মিল নেই। অনেক সময় একজনের চেহারার সাথে অন্যজনের চেহারা বা একজনের কন্ঠের সাথে আরেকজনের কন্ঠের অনেকটা বা একেবারে হুবহু মিল বলে মনে হলেও সম্পূর্ন তথা ১০০% মিল কখনও পাওয়া যায়নি বা পাওয়া যাবে না। মহান মা’বুদের কি সুনিপুণ সৃষ্টি! সুবহানাল্লাহ। আল্লাহু আকবর।
আমরা আমাদের নিজেদের শরীরের ব্যাপারেও কতটুকুইবা জানি? বিজ্ঞানীরা কি সব আবিষ্কার করতে পেরেছেন? মোটেই না। সীমিত ও ক্ষুদ্র যতটুকু আবিষ্কার করতে পেরেছেন তাতেও আমরা বিস্মিত ও হতবাক! দুটি উদাহরণ দেই। একজনের বুড়ো আঙ্গুলের ইম্প্রেশন আরেকজনের সাথে মিলে না! এক্সপার্টরা টীপসই চেক করে সহজেই ধরতে পারে! গত শতাব্দিতে আবিস্কৃত ডিএনএ টেস্টের পদ্ধতি দেখুন। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে কার ছেলে কে, কার পিতামাতা কে কে (এমনকি কাজিন, আন্কেল ও এ্যান্ট) অতি সহজেই অনেকটা ১০০% নিশ্চিতভাবে বের করা যায়। রক্ত ও লালার মধ্যে এমন পদার্থ মহান প্রভূ দিয়েছেন যা দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মধ্যে টেস্ট করে বলা যাবে কার সন্তান কে, কার মা-বাবা কে! ৫০/৬০ বছর আগেও এটা অচিন্তনীয় ছিল। এখনও অনেক কিছুই মানুষের অজানা রায়ে গেছে। কিয়ামতের মাঠে মহান প্রভূ অতি সহজেই ডিএনএ বা এর চেয়েও সহজতর উপায়ে আমাদের পরিচয়সহ উত্থিত করতে পারবেন নি:সন্দেহে। সেদিন আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমাদের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষী দিবে। মহান প্রভূ ঘোষনা দিয়েছেন “যেদিন তাদের জিহ্বা, হাত ও পা তাদের কৃতকর্মের কথা প্রকাশ করে দেবে। সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক” (সূরা নূর: ২৪ ও ২৫ নম্বর আয়াত)। মহান মা’বুদের কথার চেয়ে আর কার কথা নিশ্চিতভাবে সত্য হতে পারে!
বিশাল মহাবিশ্বের কাছে আমাদের পৃথিবীর আকৃতি শুধুমাত্র একটি বিন্দুর ন্যায় বা তার চেয়েও আর ছোট।সূর্য অনেকটা ফুটবলের মত দেখতে মনে হলেও তার সাইজ পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ গুন বড়! আর এই সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহ মিলে আমাদের গ্যালাক্সি। জ্যোতির্বিদরা মনে করেন দৃশ্যমান মহাবিশ্বে আমাদের গ্যালাক্সির মত প্রায় ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। এই গ্যালাক্সিরা আবার খুব ছোট হতে পারে,যেমন মাত্র ১০ মিলিয়ন তাঁরা সম্বলিত বামন গ্যালাক্সি এবং আবার খুব বড় হতে পারে, যেমন দৈত্যাকার গ্যালাক্সিগুলোতে ১০০ বিলিয়ন তাঁরা থাকতে পারে।
সূর্যের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুন বড় বিশালাকার তাঁরাসমুহ মহাশুন্যে আছে। আবার এই বিশালাকার তাঁরাসমুহকে খেয়ে ফেলতে পারে এমন ব্লাকহোলও মহাবিশ্বে আছে! জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন পৃথিবীতে যত বালিকনা আছে তার চেয়েও বেশী মহাশুন্যে তাঁরা আছে! আবার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এও মনে করেন যে অদৃশ্যমান মহাবিশ্বের যতটুকু আমরা জানি তা ৭-৮ শতাংশ, অন্তত ৯২-৯৩ শতাংশ এখনও আমাদের অজানাই রয়ে গেছে! সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এখন চিন্তা করুন মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী কত ছোট! আর এ জন্যই তো আমাদের প্রিয় নবী (স:) যথার্থই বলেছেন “আল্লাহর কাছে দুনিয়ার মূল্য মাছির ডানার সমানও নয়” [তিরমিযি ২৩২০, ইবন মাজাহ ৪১১০]।
পৃথিবীতে এমন কোন বই কি আছে যা কারো হুবহু (একেবারে দাড়ি-কমাসহ) মুখস্ত? কত মেধাবী লোক আছে এই ধরাতে, আছে কত ফটোগ্রাফিক মেমোরীসম্পন্ন লোক। তারা কি পারবে ১০০/২০০ পৃষ্টার একটি বই হুবহু (দাড়ি-কমাসহ) মুখস্ত বলতে? নিজেও তো খারাপ ছাত্র ছিলাম না। কত শত শত, হাজার হাজার বই ও কোইস পড়েছি, কনসাল্ট করেছি ও পড়ে নোট নিয়েছি। এ পর্যন্তই। বিষয়বস্তু বা সারাংশ অনেকটা মনে থাকলেও বিস্তারিত হুবহু ঐ বইগুলোর বা কেইসগুলোর কিছুই মনে নেই, পুরো মুখস্ত থাকা তো দূরের কথা। কিন্তু এবার চিন্তা করুন আর ভাবুন – সুবিশাল কোরআনের কথা! কোটি কোটি হাফিজ আছেন পৃথিবীতে যাদের আছে গোটা কোরআন মুখস্ত, আছে ছিনার মধ্যে সম্পূর্ন সুবিশাল কোরআন (একবারে দাড়ি-কমা, গুন্না, লম্বা-ছোট, সঠিক উচ্চারনসহ)। পৃথিবীর তাবৎ লিখিত কোরআন পুড়িয়ে ফেললেও, পবিত্র কোরআন এ ধরায় অবিকল/হুবহু অবস্থায় থাকবে মানুষের হৃদয়ে যদি মানুষ জীবিত থাকে। সুবহান আল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক ঘোষনা দিয়েছেন “আমি এই কোরআন নাজিল করেছি আর এটি সংরক্ষন করবো স্বয়ং আমি” (সূরা আল-হিজর-৯)। এবার ভাবুন, মহান প্রভূর ঘোষনার লোড ও বাস্তবতা এবং তাঁর সংরক্ষনের কি নিপুন নজীর! আলহামদুলিল্লাহ।
লেখক: বৃটেনের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, গবেষক, বিশ্লেষক, নিউহ্যাম বারার ডেপুটি স্পিকার।