মুরগীর ডিম তা দেয়ার প্লাস্টিকের ঝুড়িতে ফেলে রাখা নবজাতক কন্যা শিশু আপাতত আশ্রয় পেয়েছে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়ানা মার্জিয়া নিতুর কোলে। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে নিতু ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক এ সুযোগেই তার পৌর এলাকার ১নম্বর ওয়ার্ডের বাসার সামনে পরিত্যাক্ত অবস্থায় একটি কাঁথায় পেচিয়ে নবজাতক কন্যা শিশুকে ফেলে যায় কেউ। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে চিকিৎসা শেষে পুণরায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মায় রাখেন। এদিকে শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মেজবাহ উদ্দিন।
সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে ওয়ানা মার্জিয়া নিতুর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নবজাতক শিশুটিকে পরম আদরে আগলে রেখেছেন তিনি। পাশেই রয়েছে প্রয়োজনীয় টিস্যু, ফিডার, গুড়ো দুধ, কাপড় ছিড়ে বানানো কাঁথা। ঘরে কেউ যেন শব্দ করে কথা না বলেন তাও সতর্ক করে দিচ্ছেন নিতু। কারণ শব্দ শুনে শিশুটির ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। শিশুটির মায়ায় জড়িয়ে গেছেন বলে অবলীলায় সবার সামনে বলেই ফেললেন নিতু। ইতোমধ্যে নবজাতকের নামও রেখে ফেলেছেন তিনি। ২১ তারিখ শিশুটিকে পেয়েছেন বলে নিতু শিশুটির নাম রেখেছেন ‘একুশে’।
নিতু জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বাসায় এসে ঘুমাতে যান তিনি। তখন বাইরে অনেক্ষণ ধরে ছোট শিশুর কান্না শুনতে পান। এক সময় দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখতে পায় তার মুরগী থাকার ঘরের পাশে মুরগীর ডিম পাড়ার পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের ঝুড়ির মধ্যে কাঁথা মোড়ানো একটি নবজাতক কান্না করছে। প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়ে লোকজন ডেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তিনি। পরে নবজাতক কন্যা শিশুটিকে থানায় নিয়ে গেলে ওসি শিশুটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য নিতুর সাথে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মেজবাহ উদ্দিনকে দেখান। নবজাতকটি সুস্থ আছে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর বিষয়টি নিয়ে নিতু গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানা পুলিশের সঙ্গে আলাপ করলে তারা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে খবর দেয়। এক পর্যায়ে প্রশাসনের সবাই মিলে শিশুটিকে ভাইস চেয়াম্যান নিতুর কাছে জিম্মা রাখেন।
এ প্রসঙ্গে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়ানা মার্জিয়া নিতু বলেন, ‘ঘটনাটি যেভাবেই ঘটুক, শিশুটি নিষ্পাপ। প্রকৃত অভিভাবক খুঁজে পেলে আইনীভাবে তাদের কাছে তুলে দিব। আর যদি অভিভাবক না পাওয়া যায়-সমস্যা নেই। শিশুটি আমার কাছেই বড় হবে আমার সন্তান হিসেবেই।’
নবজাতক কন্যা শিশুটি সম্পর্কে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘শিশুটিকে শুক্রবার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দুই দিন আগে হয়তো জন্ম হয়েছে। তবে এখন সুস্থ রয়েছে।’
এ ঘটনা সম্পর্কে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ আখতার মোর্শেদ বলেন, ‘নবজাতক কন্যা শিশুটি উদ্ধার করার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আপাতত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়ানা মার্জিয়া নিতুর কাছে জিম্মায় রয়েছে।’
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত থানায় জিডির পর নবজাতক কন্যা শিশুটিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মা রাখা হয়েছে। অফিস খোলার পর রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুটি সুস্থ আছে এবং বর্তমানে পারিবারিক পরিবেশেই রয়েছে।’
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতেই এ বিষয়টি জেনেছি। নবজাতকটির প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আপাতত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মায় রাখা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Source: বিডি প্রতিদিন