দীর্ঘ ২৫ বছর প্রতিক্ষার পর ১২ ফেব্রুয়ারী বুধবার সকাল ১১ টা থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড নিবন্ধনের কার্যক্রম। বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধণ করেন। ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যলয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এই স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ, ব্যাংক হিসাব খোলা ও মোবাইলের সিম কেনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। ব্রিটেনে নিযুক্ত হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম জানিয়েছেন, আগামী মার্চে মধ্যেই ব্রিটেনে স্মার্ট কার্ড বিতরণ সম্ভব হবে।
সার্ভিসেস ডট এন আইডি ডব্লিউ ডট গভ ডট বিডি এই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন। আবদেনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশী পাসপোর্টর কপি, দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে নারিকত্বের সনদ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হননি এই মর্মে অংগীকার নামা, বাংলাদেশে রক্তের সম্পর্কের আতœীয়ের রেফারেন্স ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র সহ আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
অন লাইনে প্রাপ্ত আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট নাগরিকের উপজেলায় নির্বাচন অফিস কর্ত্তৃক যাচাই বাছাই ও তদন্তের পর পুণরায় লন্ডনের দূতাবাসে প্রেরণ করা হবে।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, যারা ব্রিটিশ সিটিজেনসীপ নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন তারা ভোটার তালিকায় নাম তুল হলে অবশ্যই দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ নিতে হবে। এসময় উপস্থিত অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন যাদের ব্রিটিশ পাসপোর্টে নো ভিসা সীল রয়েছে তাদেরকেও কি দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ নিতে হবে। জবাবে সিইসি বলেন, নিতে হবে। তবে আমরা চেস্টা করব পরারাস্ট্র মন্ত্রনালয়কে বলে তাদেরকে দ্রুত সনদ প্রদানের।
এদিকে মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম,কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন আবেদনের জন্য বিশেষ ধরনের পোর্টাল উদ্বোধন করেন সিইসি।তিনি জানান,উদ্বোধন কার্যক্রম চলার সময়ই এ অনলাইন পোর্টালে ২৪টি আবেদন পড়েছে। নূরুল হুদা বলেন, আপনারা আবেদন করবেন অনলাইনে। যত তাড়াতাড়ে সম্ভব সেগুলো সম্পন্ন করে আবার আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দেব। ছবি তুলে নিয়ে যাওয়া হবে,বায়োমেট্রিক হবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।ভোটার হিসেবে আপনারা নিবন্ধিত হবেন। পরবর্তীতে এখানে বসে বাংলাদেশে কীভাবে ভোট দিতে পারবেন,সেই ব্যবস্থাও করা হবে।ইসি কর্মকর্তরা জানান, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে ইসির নির্দিষ্ঠ ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যদি প্রদান করে আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যদি যাচাই বাছাই করে প্রবাসেই বায়োমেট্রিক সংগ্রহসহ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে।
আবেদনের সঙ্গে যে সকল দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে: বৈধ পাসপোর্টের কপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম-মোবাইল নম্বর-এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হননি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দুবাই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করে ইসি। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশি নাগরিকগণকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়।এরই মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচিত করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, সিংগাপুরসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে কার্যক্রমটি শুরু হবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
Credit: ওয়ানবাংলানিউজ