বিগত ১১ বছর ধরে দেশে বিদেশে কথিত উন্নয়নের ভুয়া প্রচার চালিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। শেখ হাসিনার দাবি-দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে তিনি এমনভাবে মজবুত করেছেন যে, আর কখনো ভেঙ্গে পড়বে না। প্রায় প্রতিদিনই তিনি গর্ব করে বলেন, বিদেশিরা দেখলেই নাকি তাকে বলে-আপনার উন্নয়নের ম্যাজিকটা কি? সেই ম্যাজিকটা কিন্তু শেখ হাসিনা কখনো বিদেশিদেরকে বলেন না।
তবে, শেখ হাসিনার কথিত উন্নয়নের ম্যাজিক এবার ফাঁস করে দিলেন তার সরকারেরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সত্যিকার অর্থেই যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না সেই কথাটা এবার নিজের মুখেই প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের বার্ষিক কার্যক্রম প্রণয়ন সম্মেলন ২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমদানি-রফতানি সঠিকভাবে হচ্ছে না।
একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন সেটা সেই দেশের অর্থমন্ত্রীই সবেচেয়ে ভাল জানেন। দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ অবস্থা যে ভাল না সেটা অর্থমন্ত্রীই ভাল জানেন। মূলত দেশের অর্থনীতির সত্য বিষয়টাই তিনি প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রীর এই কথা থেকেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ বায়ুবীয় ও ভিত্তিহীন।
তারপর, দেশের সরকারি ও বাণিজ্যিক খাতের ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থা নিয়ে বিশিষ্টজনেরাসহ অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু সরকার এসবকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। বিগত ১১ বছরে টাকা নিতে নিতে দেশের ব্যাংকগুলোকে সরকার ফুতুর করে ফেলেছে। কিন্তু এসব নিয়ে যারা কথা বলে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা উল্টো তাদেরকেই গালিগালাজ করে। এবার শেখ অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, দেশের ব্যাকগুলো ভাল চলছে না।
দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু ৬ মাসেই তার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি নিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৫ শতাংশ কম। এদিকে কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, এ বছর বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের ছয় মাসের মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সরকার। সর্বশেষ গত ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত এ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার থেকে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক, উভয় উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায়ে গতি না থাকায় উন্নয়ন ব্যয়ের ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে, ছয় মাসেই ব্যাংক ঋণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে সরকার। রাজস্ব আদায় কম হওয়া এবং ব্যাংক থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ নেয়াকে অর্থনীতির জন্য অস্বস্তি হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
সত্য কি কখনো গোপন থাকে? সত্যকে পাথর চাপা দিয়ে মিথ্যার প্রচার যতই করুক না কেন সত্য একদিন বেরিয়ে আসবেই বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, শেখ হাসিনা কথিত উন্নয়নের নামে জনগণের আইওয়াশ করছে। বাহিরে লোক দেখানো উন্নয়ন করে বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করে দেশকে বিক্রির ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা।