ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / ভৈরবে পরকীয়ার মধ্যে পরকীয়া করায় জামালকে হত্যা!

ভৈরবে পরকীয়ার মধ্যে পরকীয়া করায় জামালকে হত্যা!

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নির্মম হত্যার শিকার জামাল হত্যার রহস্য উদঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ। প্রায় তিন মাসের চেষ্টার পর মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বাহালুল খান বাহার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। জামাল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত রোববার রাতে ভৈরব পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবন, আয়েশা আক্তার আশা, বাবুল মিয়া ও মুক্তার মিয়া নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবনের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়। আশার বাড়ি ভৈরব শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকায়। বাবুল মিয়ার বাড়ি ভৈরবের জগন্নাথপুর-লক্ষ্মীপুর গ্রামে। আর মুক্তারের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাইঝচর গ্রামে। টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আলোচিত ফাইভ মার্ডার মামলাসহ ও অস্ত্র মামলার আসামি।

গতকাল সোমবার পুলিশ গ্রেপ্তার চারজনকে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে হাজির করলে টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবন ও আয়েশা আক্তার আশা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাহালুল খান বাহার জানান, নিহত জামালের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যবেক্ষণ করে চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরদিন আদালতে হাজির করার পর পবন ও আশা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও বাবুল ও মুক্তার জবানবন্দি দেননি। তাই তাদেরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন জানাবে।

আদালতে জবানবন্দি দেওয়া আশার বরাত দিয়ে পরিদর্শক বাহালুল খান বাহার জানান, আশার এক সন্তান ও স্বামী রয়েছে। কিন্তু চরিত্রগত সমস্যার কারণে স্বামী তাঁর সঙ্গে থাকেন না, খোঁজ-খবরও নেন না। এজন্য নিজের ও সন্তানের ভরণপোষণ স্বামীর কাছ থেকে আদায়ের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় দৌঁড়-ঝাপ করেন। এদিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবনের সঙ্গে আশার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ছিল। দুই বছরের ওই সম্পর্কের মাঝখানে বিবাহিত জামালের সঙ্গে আশার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে টিটু নারাজ হন। একপর্যায়ে টিটুর চাপে পথের কাঁটা সরাতে তারা জামালকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনার দিন জামাল আশার ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে তিনি কৌশলে সটকে পড়েন।

পরে টিটুর নেতৃত্বে আসামিরা পুরুষাঙ্গ কেটে ও চোখ তুলে জামালকে নির্মমভাবে খুন করে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের আলুকান্দা এলাকার একটি নির্জন জঙ্গলে বিবস্ত্র লাশ ফেলে যায়।

টিটু চন্দ্র বিশ্বাস পবনের বরাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, নিজের সম্পর্কের নারীকে নিজের করে পাওয়ায় ইচ্ছায় পথের কাঁটা জামালকে সরাতে ওই নারীর সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে ডেকে এনে তাকে বিদায় করে দিয়ে তিনজনে মিলে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।

গত বছরের ৯ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বাউসমারা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন ১০ নভেম্বর রোববার বিকেলে শিবপুর ইউনিয়নের আলুকান্দা এলাকার নির্জন জঙ্গল থেকে তাঁর পুরুষাঙ্গ কাটা বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিলকিছ বেগম বাদী হয়ে পরদিন সোমবার ভৈরব থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন জানান, ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে পুলিশের প্রায় তিন মাস সময় লাগলেও এমন আলোচিত একটি ঘটনার সমাধান হওয়ায় তিনি তৃপ্ত। এজন্য তিনি মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ও ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বাহালুল খান বাহারসহ সংশ্লিষ্ট সব পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।