একটি স্বর্ণের চেইনকে কেন্দ্র করে যশোরের শার্শার পল্লীতে জুলেখা খাতুন (২৪) নামে এক গর্ভবর্তী মা তার চার বছরের কন্যা সন্তান আমেনা খাতুনকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে। হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকালে শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শিকারপুর গ্রামে। জুলেখা খাতুন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শার্শা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গর্ভবতী মাসহ সন্তানের মৃতের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, অপমান সইতে না পেরে জুলেখা তার নিজ কন্যা সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসী দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।
মৃত জুলেখার চাচা তরিকুল ইসলাম জানায়, ৬/৭ মাস আগে শার্শা উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দিন গ্যাদনের মেয়ে জুলি বেগমের একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায়। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে জুলেখা খাতুনের মেয়ে আমেনা খাতুন চকলেট কিনতে একই এলাকার আলাউদ্দিনের দোকানে গেলে তার মেয়ে জুলি বেগম আমেনার গলা থেকে তার চুরি যাওয়া স্বর্ণের চেইন মনে করে জোড়পূর্বক খুলে নেয় এবং এলাকার মানুষদের সামনে অপমান করে। এ ঘটনা মেয়ে তার মাকে জানালে জুলেখা খাতুন জুলি বেগমকে জানায় চেইনটি তার মায়ের দেয়া। তার মা এ স্বর্ণের চেইনটি তাকে বানিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু তার মা ঢাকায় চাকরি করে বিধায় শুক্রবার ছাড়া এলাকায় আসতে পারবে না বলে মোবাইল ফোনে তৎক্ষণাৎ জানায়। এতে বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় জুলি বেগম তার বাসায় ফিরে যান। এ ঘটনার জের ধরে হারানো স্বর্ণের চেইনের মালিক জুলি বেগম শিকারপুর গ্রামের জুলেখার স্বামী আল মামুনের বাসায় প্রমাণের জন্য এলে জুলেখার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার পর ক্ষোভে অপমানে রোববার সকালে সবার অগোচরে জুলেখা খাতুন নিজ সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন।
জুলেখা খাতুনের মামাতো ননদ একই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে সীমা খাতুন জানায়, রোববার সকাল ৮টার দিকে তার ভাবীকে অনেক ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া শব্দ না দেয়ায় সন্দেহ হয়। জানালা দিয়ে দেখা যায়, তার ভাবী ঝুঁলে রয়েছে। তখন তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে লাশটি নামানোর পর খাটের উপরে তার ভাইয়ের মেয়ে আমেনার দেহটি পড়ে থাকতে দেখি। পরে এলাকাবাসী শার্শা থানায় ও স্থানীয় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
আত্মহত্যাকারী জুলেখার স্বামী আল মামুন বলেন, আমার শাশুড়ি রোজার মাসে জুলেখাকে একটি স্বর্ণের চেইন দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমি অবগত আছি। আমার শাশুড়ি প্রমাণের জন্য শুক্রবার আসার কথা। আমি রোববার সকালে রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার পর আমার ভাইয়ের মোবাইল কলের মাধ্যমে জানতে পারি আমার স্ত্রী মেয়েকে মেরে আত্মহত্যা করেছে।
নাভারন সার্কেলের এএসপি জুয়েল ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জুলি বেগম ও তার মাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
London Bangla A Force for the community…
