শেখ আব্দুল্লাহ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার পুরো নাম আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ০৭/০১/২০১৯ তারিখে এই শেখ আব্দুল্লাহকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করে। নিজেকে হাফেজ ও ক্বওমী ধারায় শিক্ষিত বলে দাবি করলেও তিনি ঠিক কোন জামাত পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন তা কোথাও সাহস করে উল্লেখ করেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলেমদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের কটূক্তি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হচ্ছেন। গত বছর ওয়াজ মাহফিলে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আলেমদের কুকুরের সাথে এবং পবিত্র ইবাদত হজ্বকে কুকুরের খাদ্যের সাথে তুলনা করলে অনলাইনে নিন্দার ঝড় উঠে। হজ্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতারণার শিকার হাজীদের ভোগান্তি আমলে না নিয়ে তিনি অনেকটা গায়ের জোরেই চ্যালেঞ্জ করে বসেন যে, এবছর অব্যবস্থাপনার কারণে হজ্বে যেতে পারেনি, এমন কেউ নাই। কিন্তু সেখানেই বেশ কয়েকজন হজ্ব গমনেচ্ছু দাবি করেন অব্যবস্থাপনা আর প্রতারণার কারণে তারা হজ্বে যেতে পারছেন না!
শুধু তাই নয়। গায়ের জোরে অনেকটা ঈদ উল ফিতরের চাঁদ দেখা যায়নি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। অথচ সেসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের চাঁদ দেখা গিয়েছিল। ধর্মীয় ব্যাপার নিয়ে শেখ আব্দুল্লাহর এমন স্বেচ্ছাচারিতায় সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠলে রাত সোয়া ১১ টার দিকে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন- দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। কিন্তু ততক্ষণে তার ঘোষণা শুনে অনেক মুসুল্লী তারাবী আদায় করেছিলেন। শুধু তাই নয়, একই বছরে শাবান মাসের চাঁদ দেখা নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। যার পেছনে এই শেখ আব্দুল্লাহর স্বেচ্ছাচারিতাকেই দায়ী করা হয়ে থাকে।
গত বছর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ হজ্ব যাত্রায় বিমান ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিলেও, উল্টো এ বছর বিমান ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ১-২ হাজার নয়, সাড়ে ২২ হাজার টাকা! গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হলে চরম হতাশা ও উষ্মা প্রকাশ করেন হজ্ব গমনেচ্ছু ধর্মপ্রাণ জনগণ।
এরচেয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে শেখ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। তাবলীগ জামায়াতের মধ্যে দলাদলি ও গ্রুপিং সৃষ্টির পেছনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই শেখ আব্দুল্লাহ। রাষ্ট্রের পদে অবস্থান করেও বিভেদ সৃষ্টি করতে সাদপন্থীদের ইজতেমার ময়দানে প্রবেশের অধিকার নাই বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় পদে অবস্থান করে জোবায়েরপন্থীদের এভাবে উস্কানী দেয়ার ফলে খুনোখুনির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। টঙ্গীতে ১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার মত ঘটনাও ঘটে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিতর্ক ও আলেম ওলামাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিতে তার বিশেষ আগ্রহ দেখে স্বভাবতই জনমনে প্রশ্ন জাগছে কে এই শেখ আব্দুল্লাহ? সে উত্তরের সন্ধানে নেমে পিলে চমকে যাওয়ার মত তথ্য পাওয়া গেছে নানা বিতর্কের জন্মদাতা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ আব্দুল্লাহ
বর্তমান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মত গুরুতর অভিযোগ। ২০১০ সালের ৫ মে সাংবাদিকদের কাঁছে তেমন তথ্যই প্রকাশ করেছিলেন মুফতি হান্নান। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানও জড়িত ছিলেন। সেদিন আদালতের বারান্দায় সাংবাদিকদের দেখে মুফতি হান্নান এসব বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সে সময় মুফতি হান্নান দাবি করেন, ‘বোমা পুঁতে রাখার সঙ্গে আমার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। বোমা পোঁতার বিষয়ে আবদুল্লাহ, মাহবুব সবই জানে। এর সঙ্গে কোটালীপাড়ার আরও অনেক নেতা জড়িত ছিল বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান। এই দুই নেতাকে তাঁর মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদেরও দাবি জানিয়েছিলেন মুফতি হান্নান।
হরকাতুল জিহাদ ইসলামী নেতা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল হান্নানের বাড়ি ছিল গোপালগঞ্জ জেলায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে গোপালগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে মুফতি হান্নানকে একটা প্লট দেয়া হয়। সরকারের সহায়তায় মুফতি হান্নান এখানে শেখ আব্দুল্লাহর প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে তোলে ‘সোনার বাংলা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি’। সেই ফ্যাক্টরিতে মুফতি হান্নান সাবানের বদলে বোমা বানানো শুরু করে। সেই বোমার উপকরণ আসতো ভারত থেকে। আর তার সরবরাহ করতো আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও আজকের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ। উল্লেখ্য এই শেখ আব্দুল্লাহ তখন ছিল গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি।
অভিযোগ রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের কাছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উপস্থিতি আছে প্রমাণ করতে শেখ আব্দুল্লাহ মুফতি হান্নানকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজি করিয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৮৬জন মানুষ হত্যা করে।
সেই সময়ে জেলায় জেলায় মুফতি হান্নানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনকভাবে শুধু একবারই মুফতি হান্নানের বোমা বিস্ফোরিত হয়নি। আর তা হলো ২০০০ সালে কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায়। সভার আগের দিন কথিত ‘৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী দুটি দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা’ ধরা পড়লেও শেখ আব্দুল্লাহর ছত্রছায়ায় থাকায় ধরা পড়েননি মুফতি হান্নান!
২০০৩ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় সরকারের আমলে মুফতি হান্নানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং ২০০৫ সালে মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল মঈন-ফখরুদ্দীনের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে মুফতি হান্নান তাঁর পুরো কর্মকান্ডের সাথে শেখ আব্দুল্লাহর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। সে সময় যৌথবাহিনী এই শেখ আব্দুল্লাহর বাসায় অভিযানও চালায়। কিন্তু সেসময় তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এসময় তিনি দুর্নীতিবাজদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।
২০০৬ সালে গ্রেফতারকৃত জেএমবি নেতা আউয়াল এবং সানি ও ২০০৭ সালে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র নাম প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল, শেখ আব্দুল্লাহ’র দেয়া টাকা দিয়েই ভারত থেকে বিষ্ফোরক এনে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলা করা হয়েছিল।
আর ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আবারো মুফতি হান্নান কোর্টে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সভাস্থলে বোমা পুঁতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল শেখ আব্দুল্লাহ ও মাহবুব।
কমপক্ষে তিনজন জঙ্গী আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে যে তাদের পরিচালিত জঙ্গী হামলার অর্থ যোগানদাতা এবং পৃষ্ঠপোষক ছিল শেখ আব্দুল্লাহ। সেই শেখ আব্দুল্লাহকেই এবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছে ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার।
জঙ্গিবাদের সাথে সংশ্লিষ্টরাই থাকে তার আশে পাশে!
সাম্প্রতিক জনপ্রিয় ইসলামী গবেষক মিজানুর রহমান আযহারীকে জামায়াতের প্রোডাক্ট বলে আখ্যায়িত করেন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ। গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে যখন তিনি এ মন্তব্য করেন তখন তিনি জঙ্গিবাদে জড়িত অপর এক আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসা জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ছিলেন এই মির্জা আজমের ভগ্নিপতি। এছাড়াও জেএমবির অপর দুই নামকরা শীর্ষ নেতা আউয়াল ও সানি ছিলেন তার নিকটাত্মীয়। জঙ্গি আউয়াল ছিলেন মির্জা আজমের ভাগ্নিজামাই এবং আতাউর রহমান সানি ছিলেন তার বেয়াই।
সেই মির্জা আজমের কাঁধে হাত রেখে জনপ্রিয় ইসলামী গবেষক মিজানুর রহমান আযহারীকে নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় বইছে নিন্দার ঝড়। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, শেখ আব্দুল্লাহদের উদ্দেশ্য কি? দম্ভভরে জনগণের বিপরীতে দাঁড়াতে কোথায় পান তিনি এত শক্তি?