বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি দিয়েছে সেটাকে ‘মনগড়া ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার’ দাবি করে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।
একইসঙ্গে এই বিবৃতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই ফরমান উল্লেখ করে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে দলটি।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, সকলেই অবগত আছে যে, এদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন নিশিরাতের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে দেখে এসে তার স্বজনরা কান্নাভেজা কণ্ঠে জানিয়েছেন, দিন দিন দেশনেত্রীর অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। সারাক্ষণ বমি করছেন। তার গায়ে প্রচাণ্ড জ্বর। সারাক্ষণ তীব্র ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। পিজি হাসপাতালে নামকাওয়াস্তে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তাতে কোনও কাজ হচ্ছে না। তাঁর যে ভয়াবহ অবস্থা, দ্রুত উন্নত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। তাঁর শরীর খুবই খারাপ। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে বেগম খালেদা জিয়া কথা বলতে পারছেন না। সেখানে ভর্তির পর এখনও তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, কিছু খেতে পারছেন না, হাত পা নাড়াতে পারছেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না।
রিজভী আরও বলেন, সরকারপ্রধানের প্রতিহিংসার আগুনে দেশনেত্রী কারাবন্দি। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা গভীর সংকটাপন্ন। অথচ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডও তার অসুস্থতা যে দেশে নিরাময়যোগ্য নয় সেটি উল্লেখ করলেও আদালত তাকে জামিন দেয়নি। ন্যায়বিচারহীনতার এই বিপজ্জনক ছবি পৃথিবীতে বিরল।
তিনি বলেন, বিএসএমএমইউর পরিচালক দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে গতকাল রবিবার এক সংবাদ বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতি মূলত শেখ হাসিনারই ফরমান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কোনও কোনও ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে, তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে, মুখের ঘা সেরে গেছে, দাঁতের ব্যথা ভাল হয়েছে, শারীরিক দুর্বলতার উন্নতি হয়েছে, আর্থারাইটিসের ব্যথা কমানোর জন্য আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে তাঁকে পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু দেশনেত্রী নাকি আর্থারাইটিসের চিকিৎসা নিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেননি, ফলে আর্থারাইটিসের আশানুরুপ উন্নতি হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউ পরিচালকের এসকল বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া ও ফরমায়েশি বিবৃতি। সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই বলেই তো ওবায়দুল কাদের সাহেবরা বিদেশে চিকিৎসা নেন। শেখ হাসিনা কারাবন্দি থাকা অবস্থায় স্কয়ার কিংবা বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। গণভবনে বসে শেখ হাসিনার তৈরি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের নামে প্রচার করা হয়েছে। সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে দেশনেত্রীকে সুস্থ বলে প্রচারের অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন শুধু মিথ্যাই নয়, একজন চিকিৎসকের পেশাদারি এথিক্সের পরিপন্থি। পরিচালক নিজে একজন ডাক্তার হয়ে এরকম কুৎসিত মিথ্যাচার করতে পারেন, যেটি এই মহান পেশাকে কলঙ্কিত করে। দেশের চারবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে পরিচালকের বিবৃতি গণভবনে তৈরি, আমি এই জীবন্ত কল্পকাহিনীর বিবৃতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
রিজভী বলেন, হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যিনি চিকিৎসক, এধরনের বিবৃতি দিতে পারেন! তাহলে কি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বোন মিথ্যা কথা বলছেন? তিনি তো মিথ্যা বলার লোক নন। তিনি তার বোনকে দেখে শারীরিক অবস্থা নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দখলদার, ভোটলুট, ব্যাংক লুটের সরকার সত্যকে ভয় পায়। তারা কখনোই সত্য প্রকাশ করবে না এটাই স্বাভাবিক। দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে সরকারি চাপের মুখে গণমাধ্যমে সব সংবাদ প্রকাশিত না হলেও বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে আসল ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। সম্প্রতি সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবন্দি বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘পঙ্গু অবস্থায় আছেন এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য তিনি অপরের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।’ আমরা সরকারকে বলবো- আজই দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে উন্নত হাসপাতালে তার চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করা হোক। তাঁকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন।
গতকাল দুপুরে গোপীবাগ এলাকায় ধানের শীষের প্রচারণায় হামলার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর অফিস থেকে সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা ও গুলি চালালে ইশরাক হোসেনসহ ২০/২৫ জন নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে এই খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। অথচ পুলিশ উল্টো ১৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মেয়র প্রার্থী ইশরাক ও নেতাকর্মীদের ওপর এই হামলা ভোটের দিন ভোট ডাকাতির পূর্ব-মহড়া। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এই হামলা। দেশে যে আইনের শাসনের বদলে পুলিশি শাসন চলছে তা গতকালের হামলা ও মামলায় আবারও প্রমাণিত।