গণজাগরণ মঞ্চের আদলে পাল্টা ‘দেশ ও ঈমান রক্ষা মঞ্চ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজত ইসলাম। বুধবার দুপুরের পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ মঞ্চ গঠনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসে কর্মসূচি নির্ধারণসহ পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে বলে জানান।
এদিকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কর্মসূচী আনুষ্ঠানিক ঘোষনা করবে সংগঠনটির নেতারা।
হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার জোহরের নামাজের পর অনুষ্ঠিত বৈঠকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমেদ শফির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমেদ বলেন, ‘কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে তা জানানো হবে।’
এদিকে হেফাজত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বাংলামেইলকে বলেন, ‘হেফাজতের কর্মসূচির মধ্যে শুক্রবার সারাদেশে জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল রয়েছে।’
সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে হেফাজত নেতারা বলেন ‘ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি কথিত গণজাগরণ মঞ্চের রাস্তা দখল ও সমাবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন হয় না। অথচ ৯০ ভাগ মোসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তৌহিদী জনতাকে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সম্মেলন করতে অনুমতি দেওয়া হয় না। মূলত ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আড়ালে বর্তমান সরকার এই দেশ থেকে ইসলাম ও ঈমানী চেতনাকে মুছে দিতে চাচ্ছে।’
হেফাজত নেতারা বলেন, ‘নাস্তিক্যবাদের পক্ষ ত্যাগ করে অবিলম্বে গণমানুষ ও তৌহিদী জনতার উপর জুলুম-অত্যাচার শুরু করেছে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণসহ হামলা, মামলা ও মানুষ হত্যা বন্ধের দাবি সহ দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ স্বাভাবিক করে অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়ে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বৈঠকে নেতারা আরো বলেন, ‘দেশ ও জনগণের জন্য উলামায়ে কেরামেরও দায়দায়িত্ব রয়েছে, তারা চুপ করে বসে থাকবে না। দ্রুত বিদ্যমান পরিস্থিতির সমাধান না হলে উলামায়ে কেরাম দেশব্যাপি সম্মিলিতভাবে তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে ‘দেশ ও ঈমান রক্ষার মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারকে অত্যাচার ও ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করবে।’
বৈঠকে গত ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দান এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে মহাসম্মেলন করতে না দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আাব্দুল করিম, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা শফিকুদ্দীন, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মুফতী ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাসান মুরাদাবাদি প্রমুখ।
বৈঠকে হেফাজত নেতারা আরো বলেন, ‘ইসলাম ধর্মীয় কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে এই সরকার এটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণের পক্ষে নয়, বরং তারা এদেশের মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদাকে ধ্বংস করে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামি সম্মেলন করতে বাধা দিচ্ছে, তাতে এই সরকার যে ইসলাম বিরোধী, ঈমান-আক্বিদা বিরোধী, আল্লাহ-রাসূল বিরোধী; এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
বৈঠকে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘সরকারের রাতদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার আয়োজন ছাড়া গণমানুষের এই শোচনীয় অবস্থার নিরসনে সামান্যতম চিন্তাও নেই। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অন্যায় নির্দেশ দিয়ে হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুলিবর্ষণ, গুমসহ এক ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে গণমানুষকে জুলুমের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। এমন জোর-জুলুম ও নৈরাজ্যকর অবস্থা একটা সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। আল্লাহ-রাসূল ও ইসলামের উপর কেউ আঘাত হানলে যেমন প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব, তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করতে চাইলে সেখানেও প্রতিবাদ করতে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।’
উৎসঃ বাংলামেইল২৪