বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না। গত রোববার সন্ধ্যায় বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় হলের কিছু ছাত্রলীগ নেতা। শিবির সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের একপর্যায়ে গভীর রাতে আবরারের মৃত্যু হয়।
আরবারের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বুধবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সরোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
সেখানে বলা হয়,‘এক গভীর উৎকণ্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি৷ বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগকর্মী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুব সংগঠনের সামাজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ বিপথগামিতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে।’
‘সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলের আদর্শবিহীন দেউলিয়া চরিত্র। আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। শুধু তাই নয়, কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গসংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কি ভয়াবহ পরিণতি আনয়ন করে, তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’
আবরার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাঝে আমাদের এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়,‘আমরা মনে করি মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সব রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গসংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে। বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে৷ কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না।’
দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন বিবৃতিদাতারা। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।