লন্ডনের কমিউনিটির স্বনামখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লন্ডন ইক্বরা ইন্সিটিটিউট আয়োজিত একটি ইসলামিক সেমিনার অনুষ্টানে প্রফেসর সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী বলেন স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো l গত ২৪ জুন সোমবার পূর্ব লন্ডনের লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্টিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট ও লন্ডন ইক্বরা ইন্সিটিটিটের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, ইক্বরা ইন্সিটিটিউট এর ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা এফ কে এম শাহজাহান এর পরিচালনায় প্রতিষ্টানের একজন ছাত্র ইলিয়াস মজুমদার কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সেমিনার আরম্ব হয় এবং শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইক্বরা ইন্সিটিটিউট প্রিন্সিপাল মাওলানা জিয়াউর রহমান,
উক্ত সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসাবে আলোচনা রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাতা, চেয়ারম্যান, সেন্ট্রাল বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অফ বাংলাদেশ ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন প্রফেসর সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী, তিনি বলেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ, জ্ঞান অর্জন করার কোনো শেষ নেই. মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লেখা পড়া করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে. এবাদত করার আগে সে ব্যাপারে জানতে হবে, শিখতে হবে, নইলে সারা রাত এবাদত করেও তা সঠিকভাবে এবাদত গ্রহণ হবে না. শুধু কষ্ট আর সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়. তাই যে কোনো এবাদত করার আগে, তার নিয়ম কানুন জানা একান্ত অপরিহার্য, সেমিনারে তিনি নারী পুরুষের অধিকার ও কর্তব্যের উপর আলোচনা বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।
স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো। পোশাক যেমন আমাদের ইজ্জত-আব্রু হেফাজত করে ও আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। আমাদের কারো পোশাক যদি কখনো ময়লা হয়ে সেটা যেমন আমরা একেবারে ফেলে না দিয়ে যত্ন করে পরিষ্কার করি, ঠিক তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর কারো কোন ত্রুটি থাকলে সেই কারনে তার পুরোটাই খারাপ, তার সাথে আর ভালো ব্যবহার করা যাবে না, এমন না। বরং, স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে সাহায্য করবে – তাহলেই সম্ভব একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা।
স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা – এটা যেমন সুখী পরিবার গঠনের অপরিহার্য শর্ত, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এটা একটা সৃষ্টিকর্তার আদেশ – যা মানতে আমরা সকলেই বাধ্য!
“পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু, নারীরদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।”
আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করেন, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে চান, তাহলে জেনে রাখুনঃ
স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের হক্ক নষ্ট করে, তাদের সাথে অন্যায় ও জুলুম অত্যাচার করে আপনি জাহান্নামে যাবেন। স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও জুলুম করার কারণে কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে খারাপ বলে মনে করে, তাহলে আপনি যতই ইবাদত করে থাকেন না কেনো, আল্লাহর কাছেও আপনি খারাপ বলে গণ্য হবেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।”
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতী হওয়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য উভয়ের ভালো হওয়ার সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন আছে!
সর্বশেষ, আপনি যদি আপনার ঘরের নারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন – আপনার পরকাল নষ্ট হবে, সাথে সাথে আপনি দুনিয়ার জীবনে থার্ডক্লাস নিম্নশ্রেণীর পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” সুনানে আত-তিরমিযী
এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড: আহসানুল্লাহ ফয়সল, মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান এবং ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড: ইমরানুল হক, ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারি আয়ুব খান, ইমাম হাফেজ আবুল হোসেন খান ও এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর দেলোয়ার হোসেন খান প্রমুখ.
সমাপনী বক্তব্যে লন্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট ও লন্ডন ইক্বরা ইন্সিটিটিটের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল বলেন, কমিউনিটির জন্য যোগ্য নাগরিক তৈরীর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো লন্ডন ইক্বরা ইন্সিটিটিউট। একজন ভালো মুসলমানের পাশাপাশি সমাজের একজন ভালো সিটিজেন হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে গড়ে উঠে সেদিকে সবচেয়ে বেশী নজর দেওয়া হচ্ছে। কমিউনিটির সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশী সেবা দিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।