ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / হাসিনাকে সংবর্ধনা ঃ হেফাজতে অস্থিরতা

হাসিনাকে সংবর্ধনা ঃ হেফাজতে অস্থিরতা

দেশের কওমিপন্থী ৬টি বোর্ড নিয়ে গঠিত আল-হাইয়াতুল উলইয়ালিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের (হাইয়াতুল উলইয়ার) আগামী ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শুকরিয়া মাহফিল করার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।

সম্প্রতি সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মার্স্টাস ডিগ্রি সমমানের স্বীকৃতি দেয়। এরপর শুকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়। হেফাজত নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাইয়াতুল উলইয়ার নীতি নির্ধারকরা হেফাজত ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। তাদের কেউ কেউ হেফাজতের ঈমান-আকিদা রক্ষা তথা ১৩ দফা দাবির কথা ভুলে গিয়ে সরকারদলীয় রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন।

নেতাদের অনেকেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় আছে। এ অবস্থায় অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংগঠনের ভেতরেই।

অভিযোগ রয়েছে, হাইয়াতুল উলইয়া ও হেফাজতের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা সংগঠনের অন্য শীর্ষ আলেমদের মতামতকে অবজ্ঞা করে একের পর এক নিজেদের মতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইতিমধ্যে হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির ও বেফাকের সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক।

পদত্যাগ করার কারণ জানতে চাইলে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ঈমান-আকিদা রক্ষার আন্দোলন তথা ১৩ দফা দাবি নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের জন্ম হয়েছিল। তবে এখন হেফাজতের শীর্ষ পদে নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন আলেম মূলনীতি থেকে সরে এসেছেন। এছাড়া কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তারা ইচ্ছামাফিক সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। এ কারণে পদত্যাগ করেছি।

আগামী ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শুকরিয়া মাহফিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুকরিয়া মাহফিল নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আমি ওই মাহফিলে যাব না।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির ও বেফাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত লালখানবাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহার ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় আমি নিজেই কওমি সনদের স্বীকৃতির এক উদ্যোক্তা ছিলাম। আমি হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে গিয়েছিলাম। সংসদে বিল আকারে পাস না হওয়ায় কওমি সনদের স্বীকৃতি থমকে যায়। আমি কওমি সনদের স্বীকৃতির পক্ষে। তবে স্বীকৃতির পরে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান ও হেফাজত আমিরের পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর শুকরানা মাহফিলের ব্যাপারে হাইয়াতুল উলইয়ার শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া হাইয়াতুল উলইয়ার কমিটির ৩২ সদস্যের মধ্যে বেফাকের এককভাবে ২২ সদস্য রয়েছে। এসব শীর্ষ আলেমদের বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আলেমরা এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত জানার কথা নয়। তবে আজ-কালের মধ্যে হাইয়াতুল উলইয়ার বৈঠকে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্য আলেমদের মাহফিলে যোগদানের নির্দেশনা দেয়া হবে।