মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা তথা সরকারপ্রধান অং সান সুচিকে দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে কানাডার পার্লামেন্ট। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ তথা হাউজ অব কমন্সেও প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। মাসখানেক আগে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা বলেও অভিহিত করে কানাডার পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ।
গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী যে নৃশংস অভিযান চালায় তা থামাতে অর্থাৎ বেসামরিক লোকদের রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সম্মানসূচক এ নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করা হলো।
অথচ মিয়ানমারের তৎকালীন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করায় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। এরপর ২০০৭ সালে কানাডা সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার নোবেল ফাউন্ডেশনের প্রধান লার্স হেইকেনস্টেনও সুচির ভূমিকা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সুচি যে অবস্থান নিয়েছেন তা দুঃখজনক। তবে তার নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করা হবে না।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুচিই হলেন প্রথম ব্যক্তি যাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করলো কানাডা।
গত মাসে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন রাখাইনের ঘটনায় তাদের প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, মিয়ানমার আর্মি বিশেষ কায়দায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা, কয়েক শ গ্রাম জ্বালিয়ে এবং ব্যাপক হারে গণধর্ষণ চালায়। এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ ছয় জেনারেলের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়। যার মধ্যে আছেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
কানাডার পার্লামেন্টের সিনেটর রতনা অমিদভার বলেন, ‘(রাখাইনে) যা ঘটেছে তা আমাদের বলতেই হবে।’ মঙ্গলবার তিনিই সুচির নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিলটি উত্থাপন করেন।
রতনা বলেন, ‘এটি গণহত্যা। যা ঘটেছে, আমাদের অবশ্যই তাই-ই বলতে হবে।’
সুচি রোহিঙ্গা নিপীড়নের কথা অস্বীকার করেছেন, আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি ও সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন, সামরিক বাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন, এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য পৌঁছাতেও দেননি- এসব অভিযোগ করে ওই সিনেটর বলেন, ‘কানাডা ও গোটা বিশ্বকে একটা শক্ত বার্তা দেওয়া দরকার ছিল যে, তুমি যদি গণহত্যার সহযোগী হও তাহলে তোমাকে সমর্থন করা হবে না। বিশেষ করে, কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব নয়(দেওয়া হবে না।’
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বার্মিজ আর্মির ওই নারকীয় অভিযানের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ও ঢোকার অপেক্ষায় আছে।