ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে রিট ঘিরে সন্দেহ

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে রিট ঘিরে সন্দেহ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অল্প কয়েকদিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট নিয়ে সন্দেহ জেগেছে অনেকের মাঝে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রায় দিয়েছেন। যার কারণে নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তারপরেও হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট কতটুকু কার্যকর হবে সেটি নিয়েও রয়েছে নানা সন্দেহ।

আর আবেদনটি জনস্বার্থে, নাকি কোনো একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে সেটি নিয়েও রয়েছে ধুম্রজাল। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম ও কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপিসহ ১৪ দলীয় জোট। তারা হাইকোর্টে রিট করেননি। রিটটি করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি কেন রিট করলেন সেটি নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। কারণ কিছুদিন আগেও এই আইনজীবী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলন।

এ বিষয়ে প্রিয়.কমের কথা হয় রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও কয়েকজন আইনজ্ঞের সঙ্গে।

আপিল বিভাগ কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে রায় দিয়েছে, তারপরও হাইকোর্ট এ বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন কি না প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। আদালত ইচ্ছা করলে নির্বাচনের আগে কেয়ারটেকার সরকার না দিয়ে অন্যকোনো ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। কিছুদিন পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আদালত এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিতে পারেন রিটের আলোকে।’

কয়েকদিন পরেই নির্বাচন, হঠাৎ এ বিষয়টি নিয়ে রিট কীভাবে দেখছেন আপনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে রিট করার।’

এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কোনো একটি বিষয়ে রিট আবেদন খারিজ হয়ে গেলে সে বিষয়ে নতুন করে রিট করা যায় না। তবে, নট প্রেস হলে পুনরায় রিট আবেদন করা যায়। সে আবেদনে নতুন প্রেয়ার (প্রার্থনা), নতুন যুক্তি দেখাতে হবে। এগুলো একটি প্যারার মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এ নিয়মটি হাইকোর্ট রুলস এ বলা আছে। কোনো রিট আবেদন নট প্রেস রিজেক্ট না হয়ে খারিজ হয়, তাহলে সে আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে হবে। পুনরায় রিট আবেদন করার সুযোগ নেই।’

আইনজীবী আমিনুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ইউনুছ আলী আকন্দের রিট নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কি উদ্দেশ্যে ইউনুছ আলী রিট করেছেন, সেটি আগে জানতে হবে। শুনানি শেষে আদালত যদি অন মেরিটে রিট আবেদনটি খারিজ করে দেয়, তাহলে এ বিষয়ে নতুন করে রিট করা যাবে না। আদেশের বিরুদ্ধে রিটকারীকে আপিল করতে হবে। আর যদি আবেদনকারী তার আবেদনটি (নট প্রেস রিজেক্ট) করাতে পারেন, তাহলে একই বিষয়ে পুনরায় রিট আবেদন করা যাবে। এটি হাইকোর্ট রুলসে বলা আছে।’

‘কোনো গোষ্ঠীর পক্ষে নয়, জনস্বার্থে রিট করেছি’ এমন দাবি ইউনুছ আলী আকন্দের। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই যে নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়া যাবে কি না। সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে যে আইন ছিল সেই আইন বাতিল করা হয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে। আদালতের সেই রায়ে উল্লেখ ছিল সংসদ নির্বাচনের ৪২ দিন পূর্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে পরবর্তী দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচন করার জন্য।’

‘দেশের ষোলকোটি মানুষের দাবি, সকল দলের দাবি সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা। কিন্তু সংবিধানে কিছুই বলা নেই, সেহেতু জুডিশিয়াল রিভিউ করার ক্ষমতা একমাত্র হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের। জুডিসিয়াল রিভিউ ক্ষমতাবলে এবং সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিটটি ফাইল করেছি। আমি রিটে প্রার্থনা করেছি ৪২ দিন পূর্বে সংসদ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা, নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার নির্দেশনা চেয়েছি।’

১ অক্টোবর, সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ইউনুছ আলী আকন্দ এই রিট দায়ের করেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সাতজনকে বিবাদী করেছেন।

রিটে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সংসদ নির্বাচনের ৪২ দিন আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে এবং নতুন আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে রুল জারিরও আবেদন করা হয়েছে।

এ ছাড়াও মামলার রুল শুনানি বা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আগের নিয়মে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আদেশ দেওয়ার বিষয়ে রিটে আবেদন জানানো হয়েছে।

২০১১ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল বলে রায় দেন। ওই রায়ের ভিত্তিতে পঞ্চদশ সংশোধনী করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।

প্রিয়