জেল দিয়ে সাংবাদিক শহিদুল আলমের মনোবল ভেঙে দেয়া যাবে না। তার সঙ্গে শুক্রবার সাক্ষাত শেষে এ কথা বলেছেন তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ। বাংলাদেশী এই প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক ও অধিকারকর্মী শহিদুল আলমের জেল নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ ও এর বাইরে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। অনলাইন আল জাজিরার খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, রেহনুমা আহমেদ বলেছেন, শহিদুল আলমের সাহস, উদ্যম অটুট রয়েছে। তিনি নিয়মিত জগিং করছেন এবং শরীরচর্চা করছেন। তার ভাষায়, তাকে আমি যত তাড়াতাড়ি বই সরবরাহ দিই তার চেয়ে আগেই সে তা পড়ে শেষ করে ফেলছে জেলের ভিতরে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) ৫০ দিনেরও বেশি সময় ঢাকার জেলখানায় বন্দি সাংবাদিক শহিদুল আলম।
তার বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ও মিথ্য তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের ইস্যুতে আল জাজিরা ও ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেয়ার পর পরই গত ৫ই আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার তার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে রেহনুমা আহমেদ আল জাজিরাকে বলেন, তার চোয়ালে ও দাঁতে ব্যাথা আছেই। কিছু খাওয়া তার জন্য কঠিন। তুলে নেয়ার আগে তার এমন কোনো সমস্যা কখনোই ছিল না।
১১ই সেপ্টেম্বর তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন আদালত। তার আইনজীবি সারা হোসেনের মতে, আদালত বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো সাধারণ নাগরিক ফেসবুকে কোনো মন্তব্য বা পোস্ট আপলোড দিতে পারেন না। শুধু একজন রাজনীতিক তা পারেন। আল জাজিরাকে সারা হোসেন বলেছেন, কেন একজন নাগরিককে এভাবে খেয়ালখুশিমতো তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হচ্ছে। অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা হোসেন ১লা অক্টোবর উচ্চতর আদালতে শহিদুল আলমের মুক্তির জন্য জামিন আবেদন করতে পারেন। ওদিকে জেলের ভিতর উন্নত সুবিধা দেয়ার যে আদেশ এর আগে আদালত দিয়েছিলেন সেই নির্দেশকে সরকার চ্যালেঞ্জ করেছে ৫ই সেপ্টেম্বর। এখনও সরকারের ওই আবেদনের বিষয়ে কোনো রুল জারি করে নি আদালত।
এরই মধ্যে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের বাইরে শহিদুল আলমের মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা, বন্ধুবান্ধব ও বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ। বৃহস্পতিবারের এ বিক্ষোভে ছিল বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক গ্রুপ, সাংবাদিকদের সংগঠন। বিক্ষোভে অংশ নেন অধিকারকর্মী কেরি কেনেডি, অভিনেত্রী ও অধিকারকর্মী শ্যারন স্টোন, শিক্ষাবিদ ও নারীবাদি গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও শহিদুল আলমের ভাতিজি সোফিয়া করিম। সেখানে সোফিয়া করিম বলেন, ক্রমাগত একনায়কতন্ত্রের দিকে দেশ এগিয়ে যাওয়া গভীর বেদনার। দেশে একটি আতঙ্ক ও নিষ্পেষণের অবস্থা বিরাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আল জাজিরার ওই খবরে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলীয় ও সরকার বিরোধী অনেক অধিকারকর্মীকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, জোরপূর্বক গুম ও গোপনে বন্দি রাখার ব্যাপক অভিযোগ আছে। এখানে শহিদুল আলম যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে অভিযুক্ত হন তাহলে তাকে ১৪ বছরের জেল দেয়া হতে পারে। যে আইনে এই শাস্তি দেয়া হবে তাকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কুখ্যাত বলে আখ্যায়িত করেছে। মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে মুক্ত মত প্রকাশের ওপর আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস সহ কয়েক ডজন নাগরিক অধিকার বিষয়ক গ্রুপ এ ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে। তাতে শহিদুল আলমের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়াবহভালে লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে নিন্দা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে তার।
London Bangla A Force for the community…
