ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / এখন থেকে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সভা-সমাবেশ হবে : বি.চৌধুরী

এখন থেকে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সভা-সমাবেশ হবে : বি.চৌধুরী

আগামীতে জনসভা করার জন্য সরকার কিংবা পুলিশের অনুমতি নেয়া হবে না জানিয়ে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কেন আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে? আপনারা যখন তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন। তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে বাধা কেন কেন, কেন? আগামী দিনে আমরা পুলিশ নয়, জনগণের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করবো।’

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বি. চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকারের কাছে আজ জনগণের প্রশ্ন- যে স্বাধীনতা আনতে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মা-বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে এর মূল্যবোধ কোন আজ পদদলিত? দিন-রাত প্রতিটি ঘণ্টায় কেন আতঙ্কে থাকবে মা-বোনেরা? কেন গুম-খুনের শঙ্কায় থাকবে জনগণ?’

তিনি বলেন, ‘কেন ঘুষ-দুর্নীতিকে ‘স্পিড মানি’ বলে সরকারিকরণ করা হলো? সমস্ত জাতির নৈতিকতাবোধকে পদদলিত করা হলো? এই অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? নিরাপদ সড়কের দাবিতে কঁচি-কিশোরদের রাস্তায় নামতে হবে কেন, কেন, কেন?’

তিনি বলেন, ‘কেনো কোটা সংস্কারের পক্ষে আমাদের আদরের ধন মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেন আন্দোলন করতে হবে? মেধাবী শিক্ষার্থীদের কী অপরাধ? কেন তাদের গুন্ডা দিয়ে, হাতুড়ি, চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করা হবে, এর জন্যই কি স্বাধীনতা?’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, ‘কেন আমার ভোট আমি দিতে পারবো না? ভোটের অধিকারকে কেন দলীয়করণ করা হল? সারা পৃথিবীতে ইভিএম পরিত্যক্ত, ইভিএম কেউ চায় না। কেন আপনাদের সুবিধার জন্য ইভিএম গ্রহণ করতে হবে? কেনো সরকারি আমলা-কর্মচারীদের দলীয়করণ করা হল? কেন মানুষকে আজ সবসময় ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, কেনো, কেনো? রাষ্ট্র তুমি কোথায়? আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গী আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র আজ কোথায়? কেন গঙ্গার পানি আমরা পাবো না, কেন বন্ধুরাষ্ট্র তিস্তার পানি দেবে না, কেন, কেন, কেন?’

বদরুদ্দোজা বলেন, ‘এখন রুখে দাঁড়ানোর সময়। এখন অধিকার আদায়ের সময়। প্রতিবাদের কণ্ঠ ধারালো করতে হবে।’

এসময় ৪ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। দফাগুলো হলো:

১) গণতন্ত্রের স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

২) স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

৩) একটি স্বেচ্ছাচারী, গণতন্ত্রবিরোধী সরকার গত ১০ বছরে যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এমনি আবারও একটি অনুরূপ সরকারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি কি? সংসদে, মন্ত্রিসভায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতেই হবে। না হলে স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশের নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা যাবে না।

৪) আমার পবিত্র স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আমার পবিত্র পতাকার বিরুদ্ধে, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে ভেজা, লক্ষ মানুষের চোখের পানিতে ভেজা এই মাটির বিরুদ্ধে যারা ছিল, যারা আছে তাদের সাথে ঐক্য হবে না।

শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে সাথে নিয়ে ভারসাম্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য বেগবান হতে পারে জানিয়ে বি, চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি এবং বিএনপির সাথে আলোচনা করছি। আশা করি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।’

এসময় তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, সবাই ইতিবাচক স্বপ্নে জেগে উঠি। স্বপ্নভঙ্গের অধ্যায় রচনা করার জন্য নয়। সিদ্ধান্ত আপনার, আপনাদের।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় ও ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ও নিতাই রায় চৌধুরী।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, জাসদ (জেএসডি) একাংশের সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির পক্ষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ডা. জাফরুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ।