সবার আগে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছিলো স্বাগতিক রাশিয়া। তাদের পর দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে উরুগুয়ে। এই দুই দলের পর তৃতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলো বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ফ্রান্স। একাতেরিনবার্গে লাতিন আমেরিকার দল পেরুকে ১-০ গোলে হারিয়ে, তাদেরকে বিদায় করে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। মিসর, সৌদি আরব, মরক্কোর পর চতুর্থ দল হিসেবে বিদায় নিশ্চিত হলো পেরুর।
এই ম্যাচে জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত। অন্যদিকে হারলেই বিদায় পেরুর। জিতলে টিকে থাকবে সম্ভাবনা। এমন সমীকরণের ম্যাচে পেরু শুরু থেকে দারুণ ফুটবল খেললো ফ্রান্সের বিপক্ষে। নিজেদের রক্ষণকে জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণে ফ্রান্সের মত শক্তিশালী দলের রক্ষণের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু গোল আদায় করতে পারেনি একটিও। উল্টো তরুণ ফুটবলার কাইলিয়ান এমবাপের অসাধারণ পারফরম্যান্সে প্রথমার্ধেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত এই এক গোলের ব্যবধানে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স।
প্রথমার্ধে পেরুর জালে আক্রমণের পর আক্রমণে সয়লাব করে দিয়েছিল ফরাসি ফুটবলাররা। আন্তোনিও গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরু, পল পগবা এবং কাইলিয়ান এমবাপে থেকে শুরু করে ফরাসিরা পুরো দলই অলআউট আক্রমণ সাজিয়েছে পেরুর রক্ষণে; কিন্তু জমাট রক্ষণভাগ দিয়ে একবারের বেশি আর ফ্রান্সকে নিজেদের সীমানায় প্রবেশ করতে দেয়নি পেরুভিয়ানরা।
৩৪ মিনিটেই দারুণ গোল। কাইলিয়ান এমবাপে ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট ফুটবলার, যিনি বিশ্বকাপে গোল করলেন। আন্তোনিও গ্রিজম্যানের কাছ থেকে বল পেয়ে আর্সেনাল তারকা অলিভিয়ের জিরু অসাধারণ ভঙ্গিমায় বলটি বানিয়ে দিলেন অলিভিয়ের জিরু। ক্রিশ্চিয়ান রামোস চেষ্টা করেছিলেন জিরুকে থামানোর। বলটা ঠেকানোরও চেষ্টা করলেন। কিন্তু রামোস এবং গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল চলে এলো পোস্টের একেবারে ডানপ্রান্তে। খুব কাছ থেকে আলতো ছোঁয়ায় পেরুর জালে বল জড়িয়ে দিলেন কাইলিয়ান এমবাপে। ফ্রান্স ১ : ০ পেরু।
এর আগের মিনিটেও দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন কাইলিয়ান এমবাপে। কিন্তু বলটিকে ব্যাকহিল দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন পেরুর জালে বল জড়ানোর। বলটি তার পায়েই লাগলো না। পল পগবা পেরুর ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে বলটি এগিয়ে দিয়েছিলেন এমবাপের উদ্দেশ্যে। ওই যাত্রায় গোল করতে ব্যর্থ হলেও পরের মিনিটেই ফ্রান্সকে এগিয়ে দেয়ার কাজটি ঠিকই করে দিলেন পিএসজি তারকা।
শুরু থেকেই আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে শুরু হয় খেলা। ১১তম মিনিটেই প্রথম গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করে দেন পল পগবা। তিনি বল এগিয়ে দেন গ্রিজম্যানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গ্রিজম্যান সেটিকে পাঠিয়ে দিলেন বারের ওপর দিয়ে। পরের মিনিটেই দারুণ এক শট নিয়েছিলেন পল পগবা। ২৫ গজ দুর থেকে তার এই শট গোলরক্ষকের সামনে ড্রপ খেয়ে বামপ্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যায়। খুবই কঠিন শট ছিল। পোস্ট বরাবর থাকলে হয়তো বা গোলও হয়ে যেতে পারতো।
১৪ মিনিটে রাফায়েল ভারানে পারতেন ফ্রান্সকে এগিয়ে দিতে। গ্রিজম্যানের কর্ণার কিক থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছুঁইয়েছিলেন তিনি; কিন্তু বলটা চলে গেলো বারের ওপর দিয়ে। ১৫তম মিনিটেই জিরু আর এমবাপে মিলে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে যান। এমবাপে প্রথমে বল দেন জিরুকে। জিরু আবার ব্যাকহিলে বলটি ফেরত দেন এমবাপেকে। পেরু ডিফেন্ডাররা এমবাপেকে ট্যাকল করে ফেলে দিলে পেনাল্টির আবেদন জানায় ফ্রান্স। কিন্তু রেফারি তাতে কান দিলেন না।
৩০ মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিলেন পেরুর ফ্লোরেস। তিনি বল তৈরি করে দেন পাওলো গুয়েরেরোকে। গুয়েরেরো স্যামুয়েল উমতিতিকে কাটিয়ে সোজা শট নেন। জোরালো শট হলেও সেটা ছিল ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিসের একেবারে হাতের মধ্যে। লরিস কোনো বিপদ ঘটতে দিলেন না ফ্রান্সকে।
৩৪তম মিনিটে তো গ্রিজম্যান, জিরু আর কাইলিয়ান এমবাপের দারুণ সমন্বয়ে গোল আদায় করে নিলো ফ্রান্স। গোল করার পরও প্রথমার্ধের বাকি সময়টা পেরুর জালে বেশ কয়েকবার আক্রমণ করেছিল ফ্রান্স। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি আর তাদের এসব আক্রমণ। ১-০ ব্যবধান নিয়েই প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় ফরাসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার পুরো মোড় ঘুরিয়ে দেয় পেরু। মরিয়া হয়ে ওঠে তারা গোল পরিশোধের জন্য। একছেটিয়া আক্রমণ চালাতে থাকে তারা ফ্রান্সের গোলপোস্ট লক্ষ্যে। ৫০তম মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো পেরু। জেফারসন ফারফান বল এগিয়ে দেন অ্যাকুইনোকে। বল পেয়ে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন অ্যাকুইনো। বল একেবারে উপরের কর্ণারে পোস্টে লেগে ফিরে যায়। দুর্ভাগ্য, মাত্র এক ইঞ্চি ভিতরে থাকলেই হয়তো সমতায় ফিরে আসতে পারতো পেরু।
৫৯ মিনিটে আন্দ্রে ক্যারিলো বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাটালেন ব্লাইজ মাতুইদি এবং লুকাস হার্নান্দেজকে। কিন্তু বলটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। বক্সের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন তিনি। ৬২ মিনিটে আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন পেরুর ক্যারিলো। কিন্তু এবারও তিনি বল পাঠিয়ে দিলেন পোস্টের ওপর দিয়ে। একের পর এক শট নিয়েও পেরুর স্ট্রাইকাররা ফ্রান্সের জাল খুঁজে পাচ্ছিল না।
৬৮ মিনিটে অ্যাডভিনচুলা বল পেয়েছিলেন ফ্রান্সের পোস্টের সামনে। তিনিও শটটি পাঠিয়ে দিলেন বারের ওপর দিয়ে। ৭৩ মিনিটে পাওলো গুয়েরেরো উমতিতিকে কাটিয়ে শট নিলে সেটাও চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। খেলার শেষ মিনিট পর্যন্ত এভাবেই একের পর এক মিসের খেসারাত দিয়ে গেছে পেরুর স্ট্রাইকাররা। দ্বিতীয়ার্ধে বলতে গেলে একাই খেলেছে পেরু। ফ্রান্সকে ব্যস্ত রেখেছে রক্ষণভাগে। যে কারণে বল পজেশনের পরিমাণ দাঁড়ায় পেরু ৫৬ ভাগ এবং ফ্রান্স ৪৪ ভাগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সই ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।