প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার পথকে আরো এগিয়ে নেয়ার বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন।
তারা বলেন, এ বাজেটে শুধু উন্নয়নের পথ নকশা দেওয়া হয়নি। এতে জনগণের মধ্যে উন্নত স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্নও জাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারা বাজেটকে গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সকাল ১১টা ১০মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। আজকের বৈঠকের এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ১ম দিনে আজ নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সরকারি দলের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, এনামুল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ইসরাফিল আলম, কাজী রোজী, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও জাসদের নাজমুল হক প্রধান অংশ নেন।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়নি। অর্থমন্ত্রীর দেয়া অতীতের বাজেটগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হয়েছে, এবারের বাজেটও বাস্তবায়ন হবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।
বিএনপি মিথ্যা কথায় অত্যন্ত পারদর্শী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপি ও তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচারের মাত্রা এতোটাই বেড়েছে যে, তিনি জাতির পিতাকে নিয়ে বলেছেন, ‘শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধ করেনি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও মুক্তিযুদ্ধ হয়নি’। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিত। বিএনপি সেই সীমা অতিক্রম করেছে।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, তেমনি অনেক মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকারদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে যেমনি রাজাকারের বিচার করা হচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে।’ স্বাধীন দেশে থেকে এমন মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখাতে পারে, কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা।
বিগত এপ্রিল মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিচার দাবি করে শাজাহান খান ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে হত্যার গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়ে দেশে অরাজকতা, নাশকতা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও তাদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ করা এবং এ ধরনের যেসব ব্যক্তি বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বহাল তাদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, যুদ্ধাপরাধীদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের সরকার বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতাকারীদের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্নকারী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ‘হলোকাস্ট বা জেনোসাইড ডিনায়েল ল’-এর আদলে আইন প্রণয়ন করে বিচারের ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল হলেও জামায়াত-রাজাকারদের সন্তানরা যেন সরকারি চাকরি না পায়। কেননা, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সন্তানরা সরকারি চাকরি পেলে আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। দেশপ্রেমহীন মেধা দেশের কোন কল্যাণে আসে না, এ কারণে মেধাবী হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-রাজাকার আর আল-শামসদের সন্তানরা যেন সরকারি চাকরিতে ঢুকতে না পারে এ জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।