লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্য মতিয়ার চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। একটি জঘন্য মিথ্যাচারের কারণে তার রিরুদ্ধে সম্প্রতি এই ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মতিয়ার চৌধুরী নিজেও বিভিন্নজনকে বিষয়টি অবগত করেছেন বলে জানা যায়। একটি সাপ্তাহিকীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেছেন, তার উপর অবিচার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মতিয়ার চৌধুরী গত ২৬ জানুয়ারী প্রেসক্লাবের নামে চলমান একটি ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তৎকালিন ট্রেনিং সেক্রেটারী মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করে একটি ম্যাসেজ দিয়েছিলেন। যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিন প্রতারক বেঈমান ওয়াদা ভঙ্গকারী থেকে সাবধান শিরোনামে মতিয়ার চৌধুরী-এই মানহানিকর পোষ্টটি দেন। সাথে সাথে ক্লাব সদস্যদের অনেকেই এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা উক্ত কুরুচিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য লেখার তীব্র প্রতিবাদ করে এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। ঐ পোষ্টে শুধু ব্যক্তি মতিউর রহমান চৌধুরীকেই আক্রমণ করা হয়নি, মূলতঃ পুরো ক্লাবকে জড়িয়ে আর্থিক অব্যবস্থাপনার কাল্পনিক অভিযোগ তোলা হয়। অবিশ্বাস্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে ক্লাবের ঐতিহ্যে কালিমা লেপন করার অপচেষ্টাও করা হয়। তাই শেষ পর্যন্ত তিন শতাধিক সদস্যধারী, বৃটেনে বাংলা মিডিয়ার প্রতিনিধিত্বুশীল সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ওই সদস্যের বিরুদ্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ বিষয়টিতে কী?পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা জানার অপেক্ষায় ছিলেন সাধারণ সদস্যরা। অবশেষে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য বিভিন্ন মাধ্যমে সেটাকে স্বাগত জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মতিউর রহমান চৌধুরীর সঠিক পরিচয় এবং মিথ্যাচারের নমুনা:
মতিয়ার চৌধুরী তার লেখায় শুধু তথাকথিত রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার হিসেবে মতিউর রহমান চৌধুরীকে চি?িত করেননি, তিনি লিখেছিলেন- মতিউর নাকি এক দোকানে কাজ করতেন এবং সেই দোকানেরও অর্থ আত“সাৎ করেছেন। অথচ মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পর্কে শুধু বাংলা মিডিয়া নয়, কমিউনিটির সর্বমহলেও সুধারণা রয়েছে। কিছুদিন প্রগতিশলী রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও মতিউর কানোদিন তথাকথিত স্বাধীনতা বিরোধী কোনো সংগঠনে যুক্ত ছিলেন না। মতিউর রহমান চৌধুরী একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার আপন মামা বর্তমানে কুলাউড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি, আরেক মামা বর্তমান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব। মূলতঃ তিনি মাষ্টার্স করার পর ঢাকায় এনজিও সংস্থা ব্রাকের রিসার্চ অফিসার ছিলেন। তারপর মেঘনা গ্রুপের ম্যানেজার এবং সবশেষে অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। লন্ডনে মিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি তিনি ক্লাবের সর্বোচ্চ ভোটে ১ম নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। সাপ্তাহিক পত্রিকার স্পেশাল কণ্ট্রিবিউটর মতিউর রহমান চৌধুরী প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সিনিয়র পোষ্টে ৮ বছর যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ক্লাবে ভদ্র, বিনয়ী ও বিশ্বস্থ মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মতিয়ার চৌধুরীর আক্রমণ এবং চরিত্রহননের অপচেষ্টা সবাইকে বিস্মিত করেছে এবং অনেকেই এই ঘটনাকে নিম্নরুচির পরিচায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
ক্লাবের অর্থের ব্যাপারে মতিয়ার চৌধুরীর কাল্পনিক বক্তব্য:
সেই কাল্পনিক লেখায় মতিয়ার চৌধুরী সুনির্দিষ্টভাবে লিখেছিলেন, ক্লাবের ট্রেনিং-এর জন্য আসা গ্রান্টের ৪ হাজার পাউন্ড মতিউর রহমান চৌধুরী ট্রেনিং সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনকালে আত“সাৎ করেছেন। যদিও একজন সিনিয়র সদস্য ও সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মতিয়ারের জানা থাকার কথা যে, সরকারি বা কোনো সংস্থা থেকে গ্রান্ট এলে তা ক্লাবের একাউন্টে আসে। এছাড়া গ্রান্টের যে কোনো অর্থের সম্পূর্ণ হিসাব দাতাসংস্থাকে ব্যয়ের প্রমাণাদিসহ বুঝিয়ে দিতে হয়। তাই মতিউর রহমান চৌধুরীকে গ্রান্টের ৪ হাজার পাউন্ড আত“সাতকারী বানানোর পাশাপাশি তিনি আরো কয়েক হাজার পাউন্ড পকেটে পুরেছেন বলে পুরো ক্লাবকেই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং এর শীর্ষ নেতৃত্বকে আত“সাতকারী হিসেবে চি?িত করেন মতিয়ার চৌধুরী।
বক্তব্যটি জঘন্য ও অসভ্য: তৎকালিন সেক্রেটারী এমদাদুল হক চৌধুরী
সদস্যদের দাবীর প্রেক্ষিতে নির্বাচনী মুহুর্তে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিলেও তৎকালিন সেক্রেটারী মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী এর বিরুদ্ধে তীব্র্র প্রতিবাদ করে ও নিন্দা জানিয়ে একই প্রুপে বিবৃতি দেন। তিনি বিষয়টিকে দুরভিসন্ধিমূলক মন্তব্য করে বলেছিলেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন বক্তব্য মিথ্যা ও মানহানীকর। প্রমাণহীন এই বক্তব্যকে তিনি অশালীন, অতিজঘন্য ও অসভ্য আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এটা স্পষ্ট যে ক্লাবের জনৈক ঐ সদস্য মতিউর রহমান চৌধুরীকে ব্যক্তিগত আক্রমণের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন।
তৎকালিন প্রেসিডেন্ট নবাব উদ্দিনের নির্দেশনা:
পরে ক্লাব প্রেসিডেন্ট নবাব উদ্দিনও সমান বিবৃতিতে সম্মতি জানিয়ে নাম যুক্ত করেন। এছাড়া ২৯ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় তৎকালীন সভাপতি নবাব উদ্দিন তার বক্তব্যে আবারো মতিয়ার চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে তার এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নব-নির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে পরবর্র্তী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
হল ভর্তি সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতিতে নবাব উদ্দিন বলেন, আমাদের একজন সদস্য মতিয়ার চৌধুরী ওয়ার্টসঅ্যাপে যে মন্তব্য করেছেন আমাদের ট্রেনিং সেক্রেটারী মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে-এর জন্য আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটা সত্যি অগ্রহণযোগ্য এবং নিন্দনীয়। মতিউর রহমান চৌধুরী একজন নির্বাহী সদস্য, এটা শুধু তার ওপর বর্তায় না, এটা আমার ওপর এবং আমাদের পুরো কমিটির ওপর বর্তায়। আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই- অতীতে যারা প্রেসক্লাবে এমন কাজ (অন্যায়) করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, আমি অনুরোধ করবো আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী এই ব্যক্তির (মতিয়ার চৌধুরীর) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নবাব উদ্দিনের এই স্পষ্ঠভাষি বক্তব্যকে ইয়েস ইয়েস উচ্চারণ করে সাধারণ সদস্যরা করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
মতিউর রহমান চৌধুরীর সন্তোষ প্রকাশ:
এ ব্যাপারে মতিউর রহমান চৌধুরী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমি অফিসিয়েলি বিষয়টি না জানলেও বিভিন্নভাবে অবগত হয়েছি যে, প্রেসক্লাব কথিত ব্যক্তির অন্যায় কার্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর জন্যে আমি ক্লাবের বর্তমান সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, সহ-সভাপতি মাহবুব রহমান ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়েরসহ কার্যকরি কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি যে, বর্তমান সভাপতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকরি কমিটি একটি সাহসি পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছে। একই সাথে আমি সাবেক সভাপতি নবাব উদ্দিন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর তাৎক্ষণিক ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়ার জন্যে কৃতজ্ঞ। সাধারণ সদস্যদের তাৎক্ষণিক সোচ্চার ভূমিকাও আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলো, এজন্যে তাদের কাছেও আমি অসীম কৃতজ্ঞ ও ঋণী।
এ ব্যাপারে প্রসক্লাব নেতৃত্ব পর্যায় থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।