৯ মার্চ, ২০১৬:
আগের শর্ত মেনেই ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় ২০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে সই করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (এক ডলার=৭৮ টাকা) যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রথম মেয়াদে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সময় ভারতের এক্সিম ব্যাংক যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছিল, সেসব শর্ত শিথিল করতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি দেশটির এক্সিম ব্যাংক। নতুন করে ২০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে আপাতত ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অবশিষ্ট টাকা থাকলে পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি প্রকল্প ঢুকতে পারে। আজ বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চুক্তিতে সই করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে চুক্তিতে সই করবেন দেশটির এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াদু ভেন্দ্রা মাথুর।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রথম মেয়াদে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সময় ভারতের এক্সিম ব্যাংক যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০ কোটি ডলার খরচেও একই শর্ত বহাল থাকবে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে শর্ত শিথিল করতে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও এক্সিম ব্যাংক জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা এসব শর্ত দিয়েই ঋণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জন্য শর্ত শিথিল করলে অন্য দেশও শর্ত শিথিলের দাবি জানাতে পারে। তাই শর্ত শিথিলের কোনো সুযোগ নেই বলে ইআরডিকে আগাম জানিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। ফলে আগের শর্ত মেনেই সরকারকে নতুন করে ২০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তিতে সই করতে হচ্ছে।
এক্সিম ব্যাংক যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০০ কোটি ডলার ঋণের আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যত ধরনের যন্ত্রপাতি ও উপকরণের প্রয়োজন হবে, তার ৭৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারত থেকে। বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশ থেকে কেনা যাবে। অর্থাৎ ১০০ টাকার মধ্যে ৭৫ টাকা খরচ করতে হবে সে দেশে। বাকি ২৫ টাকা অন্য দেশে খরচ করা যাবে। তবে পূর্তকাজ অর্থাৎ ইট, বালি, রড, সিমেন্ট বাংলাদেশে সহজলভ্য হওয়ায় এ ধরনের প্রকল্পে ভারত থেকে ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা আনতে পারবে। বাকি ৩৫ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশসহ অন্য যেকোনো দেশ আনতে পারবে সরকার।
এক্সিম ব্যাংক জানিয়েছে, ২০০ কোটি ডলার ঋণের সুদের হার হবে এক শতাংশ। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে বাংলাদেশ এই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ডের সময় সুদ গুনতে হবে না। এরপর থেকে মূল টাকার পাশাপাশি সুদ পরিশোধ শুরু করতে হবে। এ ঋণে কমিটমেন্ট ফি ধরা হয়েছে .৫০ শতাংশ। আর নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে বাড়তি ২ শতাংশ দণ্ড হিসাবে সুদ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত মেনে নিয়েছে সরকার। প্রথম মেয়াদে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তির সময় এসব শর্ত দিয়েছিল এক্সিম ব্যাংক।
ভারতের ২০০ কোটি ডলার ঋণে বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে যে ১৩টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—৩৮ কোটি ডলার ব্যয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের খুলনা-দর্শনা সেকশনকে ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ, ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনকে ডুয়েল গেজে উন্নীতকরণ, ১১ কোটি ডলার ব্যয়ে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের ওয়ার্কশপ নির্মাণ প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের রয়েছে পাঁচ কোটি ডলার ব্যয়ে বিআরটিসির জন্য ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহ, ছয় কোটি ডলার ব্যয়ে বিআরটিসির জন্য দ্বিতল বাস এবং সাত কোটি ডলার ব্যয়ে সড়ক ও জনপথের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি প্রকল্প। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ৩২ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১২ জেলায় নির্মাণ করা হবে আইটি পার্ক। নৌপরিবহন খাতে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ডলার। এ খাতের আরেকটি প্রকল্প হলো, ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো উন্নয়ন প্রকল্প।
সূত্র: কালের কন্ঠ