১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চার শিশু হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
শুক্রবার নিহত শিশুদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিল থেকে প্রত্যেক পরিবারকে তিনি ৫০ হাজার টাকা দেন। তাদের সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেবেন বলেও আশ্বাস দেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘এই শিশু হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা কেউই এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। যে কারণে এ দেশে শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে পাশের গ্রামে খেলা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকির মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমদ, আবদুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া, আবদাল মিয়ার ছেলে মনির ও আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন। বুধবার সকালে গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি ছড়ায় বালু তুলতে গিয়ে শ্রমিকেরা বালুচাপা অবস্থায় একটি শিশুকে দেখতে পান। অভিভাবকদের উপস্থিতিতে পরে পুলিশ এসে নিখোঁজ এই চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে। তার আগে নিখোঁজ সন্তানের কথা জানিয়ে বাহুবল থানায় এক পিতা ডায়েরি করলেও গা করেনি পুলিশ। উল্টো বলেছে, খোঁজ করো, আল্লাহ আল্লাহ করো।
চার শিশুর হৃদয়বিদারক পরিণতে পুরো দেশের মানুষ স্তম্ভিত, শোকাহত হলেও প্রতিমন্ত্রীর আগে নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে কেউ যাননি বাহুবলে। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় জাতীয় পার্টির সাংসদ এম এ মুনিম বাবু, নারী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচজন গ্রেফতার
চার শিশু হত্যার ঘটনায় আবদুল আলী ও তার ছেলে জুয়েলের পাশাপাশি রুবেল (১৮), আরজু (৪০) এবং বশির মিয়া (৪০) নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে আবদুল আলী ও জুয়েলকে গতকাল হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালতের বিচারক কাউসার আলম আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি পুলিশ গত মঙ্গলবার দায়ের করা অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জু র করেন। হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
রুবেলের জবানবন্দি
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় চার শিশু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি রুবেল মিয়া। তিনি প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল আলীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আজ শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়া রুবেল মিয়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বসির মিয়া ও আরজু মিয়াকে বিচারিক হাকিম-১ আদালতের বিচারক কৌশিক আহম্মদ খোন্দকারের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রুবেল মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আদালতে রুবেল মিয়ার জবানবন্দি চলছিল।
এর আগে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা সবাই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে কমবেশি জড়িত।
London Bangla A Force for the community…
