৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর লেখা যেসব মামলার রায় ও আদেশের কপি এখনো জমা হয়নি সেসব মামলার নথি অতিসত্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়। অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর লেখা রায় ও আদেশ জমা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলার পেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হলো।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর লেখা যেসব মামলার রায় ও আদেশের কপি এখনো জমা হয়নি সেসব মামলার নথি আজ-কালের মধ্যে তিনি জমা দিতে পারেন।
গতকাল এর আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী রায় ও আদেশের কপি গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ চলাকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী একটি প্রেস কনফারেন্স করেন, যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির গোচরীভূত হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ ধরনের প্রেস কনফারেন্স নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতি আশা করেন, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মাননীয় বিচারপতিরা কোর্টের পবিত্রতা ও মর্যাদা বজায় রাখার স্বার্থে এ রূপ কার্য হতে বিরত থাকবেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “প্রেস কনফারেন্সে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘আমার প্রিজাইডিং জজ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে আমার লেখা সমাপ্ত হওয়া রায় ও আদেশগুলো গ্রহণ করার অনুরোধ করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের লিখিত রায় ও আদেশ গ্রহণ করা যাচ্ছে না।’ ওই বক্তব্য প্রধান বিচারপতির গোচরে এলে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন যে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তাঁর কাছে লিখিত রায় কিংবা আদেশ গ্রহণ করার জন্য জমা দেননি। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আশা করেন, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মিডিয়ায় মামলার রায় ও আদেশ সংক্রান্ত কোনোরূপ বক্তব্য না দিয়ে তাঁর কাছে যতগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের মামলার ফাইল রয়েছে তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে অতিসত্বর ফেরত প্রদান করবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়।”
এর আগে সকালে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তাঁর লেখা পূর্ণাঙ্গ রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাঁর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করছেন না বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এ চিঠি ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর দেওয়া সাক্ষাৎকার প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত বছর ১ অক্টোবর অবসরে যান। তবে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারক রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন, আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।’ বাণীতে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তাঁর গৃহীত শপথও বহাল থাকে না। আদালতের নথি সরকারি দলিল। একজন বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর আদালতের নথি নিজের নিকট সংরক্ষণ, পর্যালোচনা বা রায় প্রস্তুত করা এবং তাতে দস্তখত করার অধিকার হারান। আশা করি বিচারকগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এমন বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’ প্রধান বিচারপতির এই বাণী ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
সূত্র: কালেরকন্ঠ