২৭ জুন ২০১৫: তিউনেশিয়া ও কুয়েতে শুক্রবার ভয়াবহ দু’টি জঙ্গি হামলায় নিহতদের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকশ’ মানুষ। মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজানের পবিত্র দিন শুক্রবারে সংঘটিত দু’টি হামলারই দায় স্বীকার করে নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা ও আল অ্যারাবিয়া। গতকাল জুমাহ’র নামাজের সময় একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতি হামলা চালায় আইএস। সে হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২২৭ জন। ঘটনার কিছুক্ষণ পরই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস। সে বিবৃতিতে আইএস আত্মঘাতি বোমা হামলাকারীর নামও প্রকাশ করে। হামলার সময় কুয়েতের রাজধানীতে অবস্থিত শিয়া মসজিদটিতে প্রায় ২ হাজার মানুষ ছিল। এর আগে গত মাসের টানা ২ সপ্তাহ জুমাহ’র নামাজের পরপর সৌদি আরবের দুইটি মসজিদে আত্মঘাতি বোমা হামলা চালায় আইএস জঙ্গিরা। পবিত্র মাস রমজানে এ ধরণের হামলা বেশি বেশি চালানোর জন্য নিজেদের অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএস।
অপরদিকে তিউনেশিয়ায় শুক্রবারের হামলাটি ছিল মূলত পর্যটকদের ওপর। উপকূলবর্তী পর্যটন শহর সসে’র দুইটি পর্যটন হোটেলের পাশের সৈকতে ওই হামলা চালায় দুই বন্দুকধারী। এতে নিহত হয়েছে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন। এদের বেশিরভাগই বৃটিশ নাগরিক বলে জানিয়েছেন তিউনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হাবিব এসিদ। বিদেশীদের মধ্যে এরপর রয়েছেন জার্মানি, বেলজিয়ান ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। দুই বন্দুকধারীর একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও, আরেকজনকে খুঁজতে ব্যপক অভিযান চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তিউনেশিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পর্যটন। গত মার্চেও রাজধানী তিউনিসের একটি জাদুঘরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২০ বিদেশী পর্যটক সহ ২৪ জন নিহত হয়। এবারের হামলায় দেশটির পর্যতন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টুইটারে এক বিবৃতিতে আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেখানে হামলাকারীর নাম ইয়াহইয়া আল-কায়রাওয়ানি বলে দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলাকারী ‘খিলাফতের যোদ্ধা’। প্রসঙ্গত, আইএস নিজেদের দখলে থাকা সিরিয়া ও ইরাকের অংশবিশেষে আত্মস্বীকৃত খিলাফত ঘোষণা করেছে। বিবৃতিতে ইয়াহইয়া আল-কায়রাওয়ানি ৪০ জন ‘বিধর্মী’কে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিউনিসিয়ায় ৮০টি মসজিদ বন্ধের পরিকল্পনা
তিউনিসিয়ার সমুদ্র সৈকতে শুক্রবারের জঙ্গি হামলায় ৩৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংসতায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনে ৮০টি মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী হাবিব এশিদের বরাতে খবরটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাবিব এশিদ বলেন, ‘যেসব মসজিদ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিচালিত হচ্ছে এবং ‘বিদ্বেষ’ ছড়াচ্ছে সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে।’ কিছু মসজিদ সন্ত্রাসবাদের বিস্তৃতি ঘটাতে বিদ্বেষ আর মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে হাবিব বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এসব মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হবে। একইসঙ্গে ‘সংবিধান বহির্ভূত কর্মকাণ্ড’ পরিচালনাকারী গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজধানী তিউনিস থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সউসের সাগর তীরে অবস্থিত কয়েকটি হোটেলে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ২৭ জনের নিহতের খবর জানা গেলেও পরে তা বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়ায়।
নিহতদের মধ্যে তিউনিসিয়ান ছাড়াও ব্রিটিশ, জার্মান, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও অন্তত একজন আয়ারল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। চলতি বছরের মধ্যে এটি তিউনিসিয়ায় দ্বিতীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। এর আগে গেল মার্চে একটি জাদুঘরে বন্দুকধারীর হামলায় ২২ জন নিহত হয়েছিল।