চলমান সংকটকালীন সময়ে জোটের কোনো শীর্ষ নেতা তার দল নিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলে বাধা দেবে না বিএনপি। যেহেতু এখন কোনো আন্দোলন বা নির্বাচন কোনোটাই নেই, সেহেতু এ জোট না রাখার পক্ষে দলটির নেতারা। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও নামসর্বস্ব এ জোটের নেতাদের নিয়ে আর চলতে চান না। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ২০ দল কোনো আদর্শিক জোট নয়। এ জোট গঠন হয়েছিল আন্দোলন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেহেতু এখন কোনো আন্দোলন নেই। আমরা এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিকট ভবিষ্যতে নির্বাচনের সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সেহেতু জোট থাকার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। তিনি আরও বলেন, আমি দলের নীতিনির্ধারণী কেউ নই, তবে হাজারও নেতাকর্মীর যে মতামত আমিও তার পক্ষে। জোট বিলুপ্ত করে দল পুনর্গঠনে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
এদিকে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিএনপির এক নেতার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ দলগুলোর নেতারা শনিবার রাতে রাজধানীর অজ্ঞাত স্থানে বৈঠক করেছেন। তারা এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি আশা করেছেন। তা না হলে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত নেতারা তাদের দল নিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও তার সময়ে জোট গঠন করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরে জোট নেতাদের উদ্দেশে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, আর জোটের প্রয়োজন নেই। আপনারা সবাই বিএনপিতে যোগ দেন। তারই আলোকে বলব, এখন আর ২০ দলের প্রয়োজন নেই। জোটের শরিক নেতাদের বলেন, আপনারা সবাই বিএনপিতে যোগ দেন। যারা না আসবেন তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবেন। বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে হাত তালি দিয়ে উৎসাহ জোগাচ্ছিলেন। নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেখে মনে হয়েছে তারাও শাহজাহান ওমরের বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
শাহজাহান ওমরের বক্তব্যে শনিবার রাতের ওই বৈঠকে জোটের অর্ধেক দল অংশ নেয় বলে টেলিফোনে জানান লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট এবং তার দল লেবার পার্টির কোনো নেতা অংশ নেননি বলে নিশ্চিত করেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, শেষদিন পর্যন্ত আমরা জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকব। ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারাও বিএনপির সঙ্গে আছে এবং থাকবে। যেহেতু এই মুহূর্তে জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়, তাই তারাও বিএনপির সঙ্গে থাকবে।
কিন্তু এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন জোট নেতারা। তাৎক্ষণিক ওই আলোচনা সভায় জোটের অন্যতম নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, তিনি এ ৬৬ বছর বয়সে বিএনপিতে যোগ দেবেন না। তার ভাষ্যমতে, জোট ভেঙে দিলে তার হয়তো ক্ষতি হবে এক আনা, কিন্তু বিএনপির ক্ষতি হবে পনেরো আনা।
শাহজাহান ওমরের ওই বক্তব্য জোটের নেতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছালে সবার মধ্যেই কম-বেশি ক্ষোভ জমতে থাকে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার জোটের শরিক কয়েকটি দল বৈঠকে বসে বলে জানান শাহাদত হোসেন সেলিম।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শাহজাহান ওমরের বক্তব্যে আমরা বেশ অপমান বোধ করছি। তার এই বক্তব্য অপ্রয়োজনীয় বলেও মন্তব্য করেন সেলিম। আমরা এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি আশা করছি। সম্মান না থাকলে জোটে থেকে কি লাভ?
জোট নেতাদের মতে, শুধু বিএনপির সঙ্গে জোট করার কারণে বিগত ৫-৬ বছর ধরে আমরা আমাদের হক-হালালি ব্যবসাও করতে পারছি না। জোটের এমন কোনো নেতা নেই যাদের নামে মামলা নেই। জোট নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, আন্দালিব রহমান পার্থ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাইদ আহমেদ, আহসান হাবিব লিংকন জেলে গেছেন। এছাড়া জেবেল রহমান গানি, গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ জোটের অনেক নেতার নামেই মামলা হয়েছে।
জোটে শরিক দলগুলোর যদি প্রয়োজন না থাকে তাহলে এসব নেতাদের বিরুদ্ধে এত মামলা হল কেন? তাদের প্রশ্ন শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে গত ৬ বছরে কটি মামলা হয়েছে? এবং তিনি আন্দোলনে কোথায় কোথায় ভূমিকা রেখেছেন? কেন একটি মামলা হল না। যেখানে বিএনপির হেন কোনো নেতা মামলা থেকে রেহাই পাননি, সেখানে কেমন করে তিনি মামলাহীন থাকেন। [Adverts]