ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। মহানগরের রাজনীতি থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলাম যুগের অবসান হতে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে এ দুই নেতা বা তাদের একান্ত অনুসারী কাউকে রাখা হচ্ছে না। আবার ঢাকার দুই মেয়রকেও মহানগরের রাজনীতির কর্তৃত্ব দেওয়া হবে না। যৌথ নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে এ খবর জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগে কারও একক আধিপত্য থাকবে না। আর মেয়রদেরও দলীয় নেতৃত্বে আনার সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া উত্তরের মেয়র সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বলয়ে বিভক্ত ছিল। ২০০৫ সালে মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুর পর মহানগরের রাজনীতি অনেকটাই মায়ার কর্তৃত্বে চলে আসে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলে কামরুল ইসলামেরও একটা বলয় তৈরি হয়। তবে মহানগর আওয়ামী লীগে মায়ার নিরঙ্কুশ আধিপত্য অনেক দিন ধরেই।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ঢাকায় ব্যর্থ হওয়ার নেপথ্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ভূমিকার কথা দলে আলোচনা আছে। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মহানগর আওয়ামী লীগে তার আধিপত্য আরও বেড়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এ ক্ষেত্রে মহানগরের নেতাদের তিনি কিছু জিজ্ঞাসাও করেননি। ফলে পছন্দের বাইরের দুই মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অভিযোগ ওঠে মহানগরের তিন নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে।
[Adverts]
দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দল-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থনে মহানগরের প্রধান তিন নেতার নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজর এড়ায়নি। মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তিনি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও কামরুল ইসলামের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চান। ওই বৈঠকের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের পতাকা কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
দলীয় নেতারা জানান, সিটি নির্বাচনের পর থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম ও হাজি সেলিম চাপে রয়েছেন। মহানগরে তাদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে তারা নিজেরাই শঙ্কিত।
এদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আড়াই বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত কমিটি হয়নি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মহানগর কমিটিকে উত্তর-দক্ষিণে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিন শীর্ষ নেতা এম এ আজিজ, মায়া ও কামরুল ঢাকা মহানগরের অবিভক্ত কমিটির পক্ষে থাকায় দীর্ঘদিনেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। যে কারণে মহানগরের কমিটি হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, খুব দ্রুতই মহানগরের উত্তর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দলীয় নেতারা জানান, ঢাকা দক্ষিণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, ফয়েজউদ্দিন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম মুরাদ প্রমুখের নাম আলোচনায় আছে। ঢাকা উত্তরে এ কে এম রহমতউল্লাহ, কামাল আহমেদ মজুমদার, আসলামুল হক ও সাদেক খানের নাম শোনা যাচ্ছে।