দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবার কঠোর হচ্ছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন তার সহধর্মিনী ও জাপার সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদও।
এবার থেকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ অবস্থান নিলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাপার একাধিক সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দলের অভ্যন্তরে নানা বিশৃঙ্খলার কারণে বেজায় চটেছেন এরশাদ। এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে হার্ডলাইনে যাচ্ছেন। কোনো কারণে কোনো নেতা যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নেন তার বিরেুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মনস্থ করেছেন তিনি। বখে যাওয়া নেতাদের সরাসরি বহিষ্কার অথবা পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার মতো সিদ্ধান্তও নেয়া হবে। দলীয় চেয়ারম্যানের এমন কঠোর সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখেই এগুচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। মাস দুয়েকের মধ্যেই এ রকম সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলেও জানায় সূত্রটি।
সূত্র আরো জানায়, সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে দ্রুত পদত্যাগের ব্যাপারেও ভাবছেন এরশাদ। এজন্য সরকারের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন তিনি। সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই মন্ত্রিসভা থেকে জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হবে। পাশাপাশি এরশাদও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছেড়ে দেবেন।
জানা গেছে, মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তে যদি তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দ্বিমত পোষণ করেন তবে তাদের প্রেসিডিয়ামের পদ হারাতে হতে পারে অথবা হারাতে হতে পারে দলের সদস্য পদও। শুধু তাই নয়, মহাসচিবও যদি চেয়ারম্যানের এ সিদ্ধান্তের বাইরে যান তবে তারও একই দশা হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র।
অপর এক সূত্র জানায়, এরশাদ দল নিয়ে এমন চিন্তা-ভাবনার কথা জানিয়েছেন সহধর্মিনী রওশন এরশাদকে। চলতি মাসে এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন তারা দুজন। রওশনের পাশাপাশি এরশাদ তার এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকেও। দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দলকে বাঁচাতে তারাও চেয়ারম্যনের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তবে বিষয়টি এখনও দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে আলাপ করেননি এরশাদ। কারণ বেশ কিছুদিন ধরে মহাসচিবের উপর বেজায় চটে আছেন তিনি। তার একটা এসপার-ওসপার করেত চান এবার।
জানা গেছে, দলকে এড়িয়ে গিয়ে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন বাবলু। সরকারের সঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে আঁতাত করেছেন বলেও খবর এসেছে এরশাদের কাছে। তাই বাবলুর উপর চটেছেন তিনি। দলের ভেতরে গুঞ্জন উঠেছে, এবার পান থেকে চুন খসলেই বাবলুকে দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। তাই কোনো পরিকল্পনা বা দলকে নিয়ে করা কোনো চিন্তা-ভাবনা জানাচ্ছেন না মহাসচিবকে।
দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘স্যার তো অনেক সময় অনেক কিছুই ভাবেন। কিন্তু নানা কারণে বাস্তবায়ন করতে পারেন না। তবে এবার যেসব কথা তিনি ভাবছেন তা অবশ্যই দলের জন্য কল্যাণকর।’
তিনি জানান, গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর প্রতিমন্ত্রীত্ব পেয়েই দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মশিউর রহমান রাঙ্গা এরশাদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সে কারণে প্রেসিডিয়াম পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য এরশাদের এমন সিদ্ধান্ত বেশিদিন টিকেনি। রাঙাকে আবার দলে ফেরানো হয়। তাই তিনি দলকে নিয়ে এখন যেসব চিন্তা-ভাবনা করছেন তা কতটা বাস্তবায়ন হয় সেটা নিয়েও সংশয় আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির আরেক নেতা বলেন, ‘এখন দলকে বাঁচানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই তিনি (এরশাদ) কঠোর হতে যাচ্ছেন। তার সাথে বিভিন্ন সময়ে যারা কাছে থেকেও দলের অনেক কিছুর বিরোধিতা করেছেন তাদের ব্যাপারেই বেশি কঠোর হবেন তিনি। এমনকি মহাসচিবও যদি বিরোধিতা করেন তার ব্যাপারেও ছাড় দেয়া হবে না।’
জাপার সূত্র জানায়, দলকে গোছাতে এবার এরশাদ নিজেই কমিটির আগাগোড়া দেখবেন এবং সেই কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় যেসব বিতর্কিত নেতা আছেন তাদের বাদ দিয়েই কমিটি করবেন।
এদিকে দলের চেয়ারম্যানের নানা সংস্কার ভাবনা ও সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।