ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / সিটি নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

সিটি নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা

সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাসহ গত কয়েক দিনের ঘটনায় এই আশঙ্কা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একপেশে আচরণ এই আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। গতকালও পুলিশের চোখের সামনেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। এর আগের দিনও উত্তরায় পুলিশের সামনেই খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলসমর্থিত প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকেরা খুবই বেপরোয়া আচরণ করছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, যাদেরকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি তারাও চরম বিপাকে রয়েছেন।

সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও অনেকে বলেছেন তারা শঙ্কার মধ্যে আছেন। পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া যাবে সেই কর্মপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে প্রতিদিনই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের হাতে থাকলেও তারা নানা চাপের মধ্যে আছেন। অনেক কিছুই করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
কয়েক দিন ধরেই নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনা ধীরে ধীরে সহিংসরূপ ধারণ করছে। গত রোববার থেকেই এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, গত দুই দিনই বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন স্থানে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। গতকাল তিনি হামলার শিকার হন। রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগের বাধার মুখে পড়েন বেগম জিয়া। আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকে। তারা খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা প্রদর্শন করতে করতে স্লোগান দেয়। এতে করে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে প্রথমে রাজউক ভবনের দুই পাশে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা নিজ নিজ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দেয়। এরপর নর্থ টাওয়ারের দুই পাশেও তারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয়।
উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের নর্থ টাওয়ারে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে খালেদা জিয়া বের হলে আবারো গাড়িবহর আটকানোর চেষ্টা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব স্থানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারণায় বাধা দিচ্ছিল তখন পুলিশ ছিল পুরোপুরি নির্বিকার। রোববার কালো পতাকা প্রদর্শন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকলেও গতকাল খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে খালেদা জিয়া কারওয়ানবাজারে নির্বাচনী প্রচারণার সময় স্থানীয় যুবলীগের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। এতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের তিনটি গাড়িসহ অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয় সেখানে। হামলার একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর দ্রুত চলে যেতে দেখা যায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সন্ধ্যার পরে যখন নেতাকর্মীরা চলে যাচ্ছিলেন তখন নয়াপল্টনে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গত কয়েক দিন ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের প্রচারাভিযানেও বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাথে আব্বাস সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে রোববার কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চালায়।
এ দিকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরকারি দলের যেসব কমিশনার প্রার্থী রয়েছেন তাদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার সংলগ্ন হরে কৃষ্ণ মুক্তা ভবনের পাশে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকনের গণসংযোগ চলার সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রোববার বেলা পৌনে ২টার দিকে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার সংলগ্ন হরে কৃষ্ণ মুক্তা ভবনের পাশে সাঈদ খোকনের গণসংযোগ চলার সময় এ সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। ঘটনার পর গণসংযোগ স্থগিত করে বাসায় ফিরে যান সাঈদ খোকন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার তাঁতীবাজারে গণসংযোগে যান সাঈদ খোকন। ঢাকা দক্ষিণের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো: আবু সাঈদের সমর্থকেরা তাতে যোগ দেন। সেখানে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ দিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সুযোগ পেলেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার হয়েছেন।

সংবাদটি নয়াদিগন্ত থেকে নেয়া