মাহমুদুল হাসান মুরাদ, লন্ডন:
প্রথমেই বলে নেই আমি কোনো রাজনৈতিক দল/অঙ্গ-সংগঠন এর সাথে কখনই যুক্ত ছিলাম না আর সাপোর্ট তো পরের কথা। বুঝার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই ঘটছে/ঘটবে তা নিয়ে সবার মধ্যে পক্ষে/বিপক্ষে মতামত থাকবেই কিন্তু কখনই নিজের মধ্যে তা নিয়ে মাথা ব্যাঁথার কোনো কারণ ছিল না। জীবনের একটা কঠিন সময় পার করছি প্রবাস জীবনে। যেখানে নিজেকে নিয়েই প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছি সেখানে ইচ্ছে থাকলেও অন্য কিছু ভাবার সময় আর হয়ে উঠে না। তবে আজ সুধু বিবেকের তাড়নায় এই লেখাটা লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রথম ভোটার হবার পর যখন সুযোগ হলো ভোট দেয়ার তখন কোনো কিছু চিন্তা না করে সুধুই একটা জিনিস চিন্তা করেছি জীবনের প্রথম ভোট যেন বিফলে না যায়। সেটা বন্ধু মহল হোক আর সমাজের মানুষদের প্ররোচনায় হোক, আমার মত আরো অনেকেই আছে যারা ঠিক একই রকম চিন্তা ভাবনা করেই নিজেদের ভোট টা একটা লটারির মত দিয়ে দেয়। কোন দল ভালো/খারাপ এই সব এর হিসেব কষার সময় নেই। যাই হোক মূল কথায় আসি। “যুদ্ধ-অপরাধীদের বিচার”। এই কাঙ্খিত বিচার আমার মত দেশের সব নাগরিক ই চায়। তো কথা হচ্ছে এই বিচার স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকার ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন এর মাধ্যমে শুরু করে। আর সবার মত আমিও বেপারটা সাধুবাদ জানিয়েছিলাম একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া বি,এন,পি আর জামাত এর সব নেতা কর্মী এই যুদ্ধপরাধের সাথে জড়িত.তখন থেকেই বেপারটা একটু খটকা লাগলো। (জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন-একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া আর সব দলের নেতাকর্মীরাই কি এই অপরাধের সাথে জড়িত??)। ভালো কথা আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল বিচারকার্য শুরু করলো। তাদের প্রথম বিচার কার্যক্রম এ জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবকে যাবতজীবন কারাদন্ড দিলো। কিন্তু তারপর থেকেই বজ্রপাতের মত শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাব ঘটল। অতপর তাদের স্বাধীনতার চেতনা দেখে বিচারক জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবকে যাবতজীবন কারাদন্ড থেকে ডাইরেক্ট ফাসির আদেশ দিলো। তখনও বেপারটা আবার খটকা লাগলো। (জাতির কাছে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন-তার মানে কি এই আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালএর বিচার প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ না??)। এই বার আসি, জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবকে ফাসি দেওয়া হলো কিন্তু তার ফ্যামিলিকে ওই সময় নির্যাতন করে লাশ তো দেখতেই দিলো না উল্টা রাতের আধারেই খুব দ্রুত আর গোপনীয়তা রক্ষা করে দাফন কার্য সম্পাদন করা হলো। তখনও মনের ভিতর খটকা লাগলো। (জাতির কাছে আমার তৃতীয় প্রশ্ন- যুদ্ধঅপরাধের সর্বোচ্চ দন্ডে বিচার সম্পাদন হলো এতে তো বাংলার জনগনের খুশি হওয়ার কথা কিন্তু রাতের আধারে খুব দ্রুত আর গোপনীয়তার রক্ষা করে তরিঘরি দাফন কার্য কেন সম্পাদন করা হলো। আর প্রিন্ট মিডিয়া সহ সকল প্রকার সংবাদমাধ্যম কেও বা কেন বাধা দেওয়া হলো। সারা বিশ্বকে তো যুদ্ধ-অপরাধীর চেহারাটা দেখানো থেকে বঞ্চিত করা হলো??)। এবার আসি আমাকে দিয়ে কিছুটা পর্যালোচনায়, এই একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগের মানুষ হয়ে আমার যখন বয়স ১৮ তখন আমি কি করেছি.ভাইরে একটা প্রেম করার সাহস হয় না যেখানে, সেখানে..!!! এই বয়সে একটা ছেলে বয়:সন্ধিকাল পার করে। অনেক কিছুই তার কাছে নতুন মনে হয়.সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। যাই হোক মূল কথায় আসি.কাল জনাব কামরুজ্জামান সাহেবের ফাসি হয়ে গেল। যেই মামলায় তার ফাসি হলো, রায়ের বিবরণী পত্রিকা থেকে পরে যতটুকু জানলাম। তখনি আবার মনের মধ্যে খটকা লাগলো। একজন ১৮ বছরের যুবক কিভাবে সোহাগপুরের ১২৬ জন মানুষকে হত্যা, আর শত শত নারীকে একা নেতৃত্ব দিয়ে ধর্ষণ করে। মনে হয় ওই সময় সব ১৮ বছরের যুবকদের মেগনেটিক পাওয়ার ছিল..!!! (জাতির কাছে আমার চতুর্থ প্রশ্ন-দীর্ঘ ৫০ বছর আগের প্রেক্ষাপটে একজন ১৮ বছরের যুবকের দ্বারা একা নেতৃত্ব দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব কিনা??)। আরেকটা বেপার একটু খটকা লাগে আর তা হলো, আওয়ামীলীগ সাপোর্ট করলে মুক্তিযোদ্ধা আর অন্য দল সাপোর্ট করলে রাজাকার। (জাতির কাছে আমার সর্বশেষ প্রশ্ন-যুদ্ধ কি আওয়ামীলীগ এর লোকজন একাই করছে নাকি, বাকি সব লোকজন ঘুমাইছিল মনে হয়)। আজকাল এই ডিজিটাল যুগেও নেতৃত্ব দিয়ে একজন ১৮ বছরের যুবক দ্বারা ৫ জন হত্যাকারী গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শোনা যায় না। যাই হোক ২০১০ সালে যাদের নাম যুদ্ধ-অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের অনেকেরই নাম সেই সময়ের রাজাকার লিস্ট এ ছিল না। আর ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী আন্দোলনের সময় এক সাথে আন্দোলন, আর এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তারা হয়ে গেল যুদ্ধপরাধী.বেপার গুলো মনের মধ্যে সুধু প্রশ্নই জাগে..!!! উত্তর আর পাওয়া হয়ে উঠে না। চেষ্টা যে করি নি তা না.বাবা,মাকে জিজ্ঞাসা করলে ঝারি দিয়ে বলে খেয়ে দেয়ে কাজ নেই না। পরা শুনা করে মানুষ হ..!!! মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেকে কেন জানি অমানুষের মত লাগে। আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনীতি কখনই আমাদের সাধারণ জনগনের জন্য সুফল বয়ে আনে নি আর অনবেও না। যুদ্ধপরাধীর বিচার আমরা সবাই চাই তবে সেটা হতে হবে নির্ভুল প্রমান সহ নিরপেক্ষ, তাহলেই সেটা হবে যথাযত আইনি প্রয়োগ। এতটুকু বুঝি স্বজন হারানোর কষ্ট। পাক হানাদার বাহিনী কতৃর্ক যেভাবে নিরীহ মানুষ কে হত্যা করা হয়েছিল সেটা যারা স্বজন হারা হয়েছে তারাই বুঝবে। তাদের প্রতিটি পরিবার যেন একেকটি ক্ষুধার্ত বাঘ। তারা যুদ্ধপরাধীর ফাসি হলে খুশি হবেই, আনন্দ করবেই.তবে তাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনার বুঝেন স্বজন হারানোর বেদনা। যুদ্ধপরাধীর নামে নিরীহ মানুষ কে হত্যাকান্ডে অন্য পরিবারকে স্বজন হারানো করা কখনই আনন্দের উপলক্ষ হতে পারে না। যুদ্ধপরাধীর বিচার নিয়ে যখন আমি খুব বজ্র কন্ঠিত সেখানে এই হত্যাকান্ডে নিজেকে কেন জানি খুব অসহায় লাগে। আজ হতে পারত উনি আমার বাবা, আমি যতই আমার বাবাকে নির্দোষ বলে দোহাই দিতাম, পারত কেউ আমার বাবাকে পরবর্তিতে ফিরিয়ে দিতে?? যখন বুজবেন বাবা হারানোর বেদনা, যখন বুঝবেন স্বামী হারানোর বেদনা, তখন অন্য বাবা/স্বামী হারালেও এটলিস্ট উল্লাস, আনন্দ প্রকাশ করবেন না। মনে রাখবেন আমরা সবাই মানুষ। কেউ ভুল ত্রুটির উর্ধে না। আর সবাইকেই মরতে হবে। সে জালিম হোক আর আলিম হোক।
বি:দ্র: আমার কতিপয় কিছু বিষয় জানার আগ্রহ থেকেই এই প্রশ্ন গুলো। এতে মনে হবার কারণ নেই আমি যুদ্ধপরাধীর পক্ষে স্ট্যান্ড নিছি। তাই আবার ছাগু, নতুন প্রজন্মের রাজাকার বলে সম্ভোদন করার চেষ্টা কইরেন না দয়া করে। আমাদের দেশে কিসের অভাব আছে। একমাত্র রাজনৈতিক হানাহানি,পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর দুর্নীতি না থাকত, তাহলে আজ বিশ্বের দরবারে আমরা অনেক উচুতে থাকতাম। স্বাধীন দেশ হয়েও আজ আমরা পরাধী । মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন সহ কত অহংকার আমাদের বাঙালিদের.তারপরেও আমরা দেশের বিরুদ্ধে অন্যের দালালি করি.দুর্নীতি করে দেশটাকে লুটে পুটে খাওয়াকে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে?? ন্যাঁয় বিচার, মানুষের হক, এগুলো সমাজ থেকে উঠে গেলে কখনই সেই সমাজের উন্নতি সাধন হয় না। আসুন দেশকে ভালবাসি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলি সে যেই হোক.নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলেও অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেই। যাই হোক অনেক ভাষণ দিয়ে ফেলেছি, আমার কথায় হয়তো অনেক অসঙ্গতি, ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আর কাউকে আঘাত/কষ্ট দেয়ার জন্য আমি এই লেখা লেখিনি। তারপরেও মনের অজান্তে কাউকে যদি কষ্ট দিয়ে থাকি আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দিবেন। সবাই ভালো থাকবেন।
(আল্লাহ হাফেজ)
London Bangla A Force for the community…
