গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর খুনোখুনির কয়েকটি ঘটনায় সরকার চাপে পড়েছে।
বিশেষ করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসব ঘটনার কোনো প্রভাব পড়ে কি না, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ে দুশ্চিন্তা আছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ অবস্থার কথা জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এসব ঘটনায় কোনো সরকারই খুশি হতে পারে না। সরকারের নীতিগত অবস্থান হচ্ছে কঠোর। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১২ এপ্রিল কুমিল্লায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন দুজন। রাজধানীর চৌধুরীপাড়ায় ঝিলের মধ্যে দোতলা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের নেতা মনির অবৈধভাবে ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই ঘর দেবে গিয়ে গত বুধবার প্রাণ গেছে ১২ জনের।
পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণের দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী এক আদিবাসী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেন। একই দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেন। উভয় ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডব্লিউ সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হুমকি দেন ও লাঞ্ছিত করেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোটের গত তিন মাসের হরতাল-অবরোধের মতো একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই দলীয় নেতারা নির্ভার ও ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রলবোমা আর সহিংসতা ও নাশকতার বিষয়টি প্রচারণায় এনে তাদের ঘায়েল করার রাজনৈতিক কৌশল নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুনোখুনি এবং শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় আওয়ামী লীগে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতার মতে, এসব ঘটনা খুশি হওয়ার মতো কিছু নয়, দলের জন্য কোনো সুখবর নয়। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাগুলো দল ও সরকারের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। আবার তাঁদের কারও কারও মতে, ছাত্রলীগের এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন পর পর থেমে থেমে ঘটনাগুলো ঘটছে। এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না।
কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, স্থানীয় নেতাদের আধিপত্য আর নিজ প্রভাববলয় বিস্তারের জন্য এসব খুনোখুনি হচ্ছে। তাঁরা ব্যক্তিস্বার্থে ক্যাডার রাজনীতি করছেন। এখানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কোনো হাত নেই। তা ছাড়া দলে কিছু সুযোগসন্ধানী ঢুকে পড়ায় এসব ঘটনা ঘটছে।
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সরকার ও দল বিব্রত হয়ে থাকলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের অবস্থান নমনীয় নয়। স্থানীয় নেতাদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না, এমনকি দলীয় পদবিও দেওয়া হবে না। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের একজন সাংসদ এবং কক্সবাজারের একজন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারলেও কেন নিজ দলের অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যাচ্ছে না—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Source: প্রথম আলো