হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শিক্ষক ছাত্রসহ অন্তত ১০ জন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এর সময় ককটেল বিস্ফোরণ পুলিশের গুলিবর্ষণ টিয়ারশেলে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে আহত ৭-৮জনকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। হলে হলে চলছে তল্লাশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ রিয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার রায় সিটনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নুর হোসেন হল দখল করে নেয়।
অপরদিকে, রিয়েল ও সিটনের দখল করার হোসেন হলের দখন পুনরায় ফিরে পেতে অপর গ্রুপ হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি, শেখ রাসেল হলের সভাপতি পলাশ ও ছাত্রলীগ নেতা নয়নের নেতৃত্বে পাল্টা হামলা চালালে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ রিয়েল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতা জেমি, পলাশ ও নয়নের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতাদের গুলিতে মিল্টন ও জাকারিয়া নামে দুইজন নিহত এবং জাহিদ, সিফাতসহ পাঁচ জন আহত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় অডিটেরিয়ামে সেমিনার চলাকালীন রিয়েল ও সিটনের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ সংয়োগ বন্ধ করে দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিসিসহ সবার ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিই। এ সময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে আসলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি এ মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।
হাবিপ্রবি প্রক্টর এটিএম শফিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে আহত ৭-৮জনকে আমরা উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি প্রেরণ করেছি। তবে এদের মধ্যে ৩জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। পুলিশের নিয়ন্ত্রণে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। পুলিশ বিভিন্ন হলে তল্লাশি করছে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম খালেকুজ্জামান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং আহত হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। দীর্ঘ ১ মাস ১২ দিন পর গত ১১ জানুয়ারি খুলে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি আবাসিক হল। ওইদিন কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরদের বিরুদ্ধে। এঘটনার প্রতিবাদে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবার আগেই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি গ্রুপ শিক্ষকদের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি সংঘর্ষে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন রিয়েল ও সিটন গ্রুপ।