গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া মামলায় জামিন নিতে আগামীকাল আদালতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুদিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে সে ধরনের প্রস্তুতি চলছে। খালেদা জিয়ার গুলশান এভিনিউয়ের বাসাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আদালতে গেলে কার্যালয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন শঙ্কাও মাথায় রেখেছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা।
আদালতে গেলে জামিন পাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তও আসতে পারে বলে মনে করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
আদালতে কোনো অঘটন না ঘটলে সে ক্ষেত্রে প্রথমত কার্যালয়েই ফেরার চেষ্টা করবেন বিএনপি প্রধান। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে গুলশানের বাসায়ও যেতে পারেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তিন মাসেরও বেশি সময় গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু গত ৩৯ দিনেও ওই পরোয়ানা থানায় যায়নি। অবশ্য এ নিয়ে আদালত ও গুলশান থানার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। আদালত বলেছে, পরোয়ানা থানায় পাঠানো হয়েছে, আর থানার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এখনো কোনো পরোয়ানা তারা হাতে পাননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারের নীতি-নির্ধারকদের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত না পেলে পরোয়ানা নিয়ে কোনো পক্ষই স্পষ্ট বক্তব্য দেবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন। সরকারের দায়িত্ব হবে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া। আমরা আগেও বলেছি, বিএনপি প্রধান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আদালতে যেতে ইচ্ছুক। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যেতে পারছেন না।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আদালতে যাবেন কি না- তা আইনজীবীদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে।
জানা যায়, গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া বেগম জিয়া গত দুদিন ধরে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়ে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারাও আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাই প্রাথমিকভাবে আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন তিনি। আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বেগম জিয়ার ইতিবাচক মনোভাবের পরপরই গুলশান কার্যালয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে কার্যালয়ে থাকা নেতা-নেত্রী ও স্টাফদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কাজ করছে। আদালতে গেলে ফের কার্যালয়ে না ফেরার শঙ্কা মাথায় রেখেই সব কিছু নতুন করে ভাবা হচ্ছে। আদালত থেকে সরাসরি গুলশানের বাসায় গেলে লাভ-ক্ষতির হিসাবও করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার এক স্টাফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আদালতে যাবেন- এমনটাই শুনেছেন তারা। এ জন্য বাসাকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। কারণ, গুলশান কার্যালয় থেকে একবার বেরুলে সেখানে না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি। এ কারণে বাসায় থাকা সব কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে গুলশান কার্যালয়ে থাকা আর বাসায় থাকার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আদালতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কার্যালয়ে ফিরতে নাও দেয়, তাতেও জোরালো কোনো আপত্তি করবে না বিএনপি। তবে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের এ মুহূর্তে মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয় কি না- তাও পর্যবেক্ষণ করতে চায় দলটি। প্রার্থীদের প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে অবাধ চলাফেরার সুযোগ না দিলে আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাববে দলটি। তবে কোনো কারণে খালেদা জিয়াকে জেল হাজতে পাঠানো হলে পরবর্তী করণীয় কী হবে- তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। প্রায় দুমাস ধরে গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ ছাড়া সব কিছুই বিচ্ছিন্ন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি প্রধানের দেখা সাক্ষাতের সুযোগও নেই। দীর্ঘদিন নেতাদের কাছ থেকে তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বাইরেও বেরুতে পারছেন না। কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এসবির সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায় পেশাজীবী ছাড়া কারওর সঙ্গেই বিএনপি প্রধানের দেখা-সাক্ষাৎ মিলছে না। তাই বাসায় গেলে পরিস্থিতি কি হয়, তাও যাচাই করতে চান খালেদা জিয়া।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ওই মামলা দায়ের হওয়ার পর অনেকবার তারিখ পিছিয়েছে। ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণও পিছিয়েছে কয়েক দফা। পরপর কয়েকবার আদালতে হাজির না হওয়ার বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানা মাথায় নিয়েও তিন মাস ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। অবশ্য আদালতের ভাষায় তাকে ‘ফেরারি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ওই কার্যালয় থেকে বের হননি। মামলার শুনানি হলেও তিনি হাজিরা দেননি। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আদালতেও যেতে চান। কিন্তু তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জরুরি। কারণ, গত ২৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার গাড়িবহরে হামলা হয়। এ নিয়ে আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করে নিরাপত্তার বিষয়টি বলেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’