পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের প্রধানের পদমর্যাদা উন্নীত করাসহ তার ক্ষমতা বাড়িয়ে সদস্যদের ওপর বাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধি সংশোধনের দাবি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
র্যাবের ১১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দরবার এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অধিনায়ক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে নানা প্রস্তাব ও দাবি উত্থাপন করা হয়।
র্যাব প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর অনুষ্ঠানে গেলেন।
বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচলক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সকল পর্যায়ের সদস্যদের সাথে নিয়ে কথা বলায় সবার মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে।
উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কর্নেল আহসান বলেন, “তিনি অভিভাবকের মতো আমাদের বক্তব্য আন্তরিকতার সাথে শুনেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত র্যাবের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অপরাধে শাস্তির বিধানে বৈষম্য দূর করার জন্য র্যাবের প্রচলিত আইন পরিবর্তন করার কথা উঠে। একইসাথে র্যাবে র্যাব কর্মকর্তারা বাহিনীর প্রধানের পদকে গ্রেড ওয়ান করার কথা বলেন।”
বর্তমানে র্যাব প্রধানের পদমর্যাদা অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শকের অর্থ্যাৎ অতিরিক্ত সচিবের সম মর্যাদার।
বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত র্যাব সদস্যদের অপরাধের শাস্তির বিধান ভিন্ন ভিন্ন।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে একজন কর্মকর্তা বলেন, “অপরাধের অভিযোগ আসলে শাস্তির প্রস্তাব করে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানোর পর কোন বাহিনীর সদস্যরা আদালতে গিয়ে চাকুরি ফেরত পান আর কারো আদালতে যাওয়ারই সুযোগ নেই।”
সেজন্য র্যাবের অধীনেই তাদের চূড়ান্ত শাস্তির বিধান রেখে এক্ষেত্রে মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে আইন সংশোধন করার দাবি করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যাহার করে নিয়ে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠনো হয় এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীর আইনে তাদের বিচার হয়।
পুলিশ বাহিনীর অধীনস্থ র্যাবের বাজেট পৃথকভাবে দেওয়ার দাবি করেন র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাবে বর্তমানে কর্মকর্তা ঘাটতি আছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, শতকরা প্রায় ২০ ভাগ কর্মকর্তা ঘাটতি আছে। এখানে যাদের পাঠানো হয় তাদের অধিকাংশই প্রশিক্ষিত বা অভিজ্ঞ নন। এ ক্ষেত্রে বাছাই করে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে র্যাবের মূল লক্ষ অর্জিত হবে এমন ধারণাও দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
বাছাই করার বিষয়ে মহাপরিচালকের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত বলেও তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন।
ওই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, “র্যাবে যোগদানের পর দেশে এবং দেশের বাইরে গিয়ে অনেক সদস্যই বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। কিন্তু কাজে যোগদানের পর এক দেড় বছরের মধ্যেই তারা বদলি হয়ে যান। ফলে তাদের কোন সেবাই পায় না র্যাব।”
এক্ষত্রে মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে অন্তত চার বছর র্যাবে থাকার বাধ্যবাধকতার বিধান রাখার কথা বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত র্যাব সদরদপ্তরে এসব বৈঠক হয়।
এর আগে মূল অনুষ্ঠানে র্যাবের সব সদস্যদের নিয়ম মেনে চলার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে র্যাবে যারা কর্মরত রয়েছে, বিভিন্ন ফোর্স থেকে আপনাদের এখানে পাঠানো হয় দায়িত্ব পালনের জন্য। যে ফোর্স থেকেই আপনারা আসেন না কেন, আপনারা যখন, যেখানে দায়িত্ব পালন করতে আসবেন, তখন সেখানকার আইন-কানুন, নীতিমালা মেনে আপনাদের চলতে হবে।
“এ পেশায় আপনাদের আন্তরিক থাকতে হবে। আপনি যখন যার কমান্ডে আছেন, যে দায়িত্ব পালন করছেন- সে দায়িত্ব আপনাকে যথাযথভাবেই পালন করতে হবে।”
“যখন যেখানে কাজ করবেন- সেখানকার নীতিমালা, সেখানকার আইন, সেখানকার বিধি সেগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে সকলকে আরও আন্তরিক হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আকাশ এবং নৌপথে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে পৃথক ব্যাটালিয়ন গঠন এবং উন্নতমানের সরঞ্জাম র্যাবে যুক্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।
জিয়াউল আহসান বলেন,“প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে বোঝা গেছে তিনি র্যাবকে আরও আধুনিক হিসাবে দেখতে চান। সেক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবেন।”